আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পকে ভিন্নরূপ দিয়েছেন জেহেরুল হক

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 d ago
জেহেরুল হক তার শিল্পকার্যের সঙ্গে
জেহেরুল হক তার শিল্পকার্যের সঙ্গে
 
আরিফুল ইসলাম / গুয়াহাটি

প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণই যে একমাত্র পথ নয়, তা প্রমাণ করেছেন দরং জেলার এক যুবক। চিত্রকলায় কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও জেহেরুল হক নামের ওই যুবক চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পকে দিয়েছেন এক ব্যতিক্রমী রূপ। মরা কাঠকে শিল্পের পরিণত করেছেন। কাঠ কেটে তিনি আঁকেছেন অনেক চিত্রকর্ম।
 
দরং জেলার দুমুনিচকির বাসিন্দা জেহেরুল হক নিজের বাড়িতেই কাঠ কেটে ভাস্কর্য ও চিত্রকলার সংমিশ্রণে এক ব্যতিক্রমধর্মীভাবে 3D চিত্র তৈরি করে আসছেন। ছোটবেলা থেকেই জেহেরুলের চিত্রকলার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল, যদিও তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি।
 
শুরুর দিকে জেহেরুল পেনসিল আর্ট করতেন। কাঠ কেটে চিত্র তৈরি করা শুরুতে তাঁর জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের কাজ দেখে দেখে তিনি খুব দ্রুত এই দক্ষতা অর্জন করেন।
 
জেহেরুল হকের স্পর্শে প্রাণ ফিরে পাওয়া কয়েকটি 3D চিত্র
 
‘আওয়াজ – দ্য ভয়েস’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেহেরুল হক বলেন,“আমি ছোটবেলা থেকেই চিত্রকলার প্রতি আগ্রহী
ছিলাম। একাদশ শ্রেণি থেকে আমি পেনসিল আর্ট করতে শুরু করি। এরপর কাঠে 3D আর্ট তৈরি করতে শেখি এবং এখন
সেইভাবে কাজ করে চলেছি। কাঠের বোর্ডগুলো আমি অর্ডার করে কিনে আনি এবং যেটা আঁকতে হবে, সেটার কাটিং করি। প্রথমে আঁকতে চাওয়া ছবিটি বোর্ডে পেনসিল দিয়ে এঁকে নিই, তারপর বোর্ড কেটে সেই ছবি তৈরি করি। যদি সকাল থেকে কাজ করি, তাহলে দিনে মাত্র দুটো ছবিই তৈরি করতে পারি, কারণ একটি ছবি তৈরি করতে অন্তত ৫–৬ ঘণ্টা সময় লাগে।”
সামাজিক মাধ্যমে জেহেরুলের কাজ শুধু প্রশংসাই পাচ্ছে না, বরং সবাই তা আন্তরিকভাবে গ্রহণও করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের ছবি তৈরি করে দেওয়ার জন্য জেহেরুলকে অর্ডার দিচ্ছেন। একটি ছবি তৈরি করে দেওয়ার বিনিময়ে জেহেরুল ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন। ইতিমধ্যে তাঁর দক্ষ হাতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতি।
 
জেহেরুল বলেন,“যার মনে শিল্প রয়েছে বা যারা শিল্পচর্চা করে, তারা সাধারণত কারো অধীনে থাকতে চায় না। আমি এই কাজটি করে মানসিক শান্তি পাই, তাই এটাকেই আমি নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমি ১৫০-রও বেশি ছবি তৈরি করেছি। এর মধ্যে কিছু আমি উপহার হিসেবে দিয়েছি, আর কিছু করেছি অর্ডার অনুযায়ী। ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে আমি কাঠে 3D আর্ট শেখা শুরু করি, যদিও প্রথম ছয় মাস আমি শুধু অনুশীলনই করেছিলাম। এরপর থেকে আমি নিখুঁতভাবে কাজ করতে শিখি এবং অর্ডার অনুযায়ী কাজ নেওয়া শুরু করি।” 
 
বর্ষা রাণী বিষয়া এবং নিতুমণি শইকীয়াকে ছবি উপহার দেওয়ার মুহূর্তে
 
বর্তমানে জেহেরুল হক তাঁর 3D আর্টকে আরও উন্নত করার জন্য কাজ করে চলেছেন। নতুন নতুন রঙের সংযোজনের মাধ্যমে এই শিল্পগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলেই জানান এই প্রতিভাবান যুবক। নিজের কাজকে আরও আধুনিক ও পেশাদারভাবে গড়ে তুলতে তিনি বাড়িতেই একটি স্টুডিও নির্মাণ করছেন।
 
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর জেহেরুল হক তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন। এরপর এক বছর তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এবং একটি দোকানও চালাতেন। কিন্তু শিল্পকর্ম ছাড়া অন্য কোনো কাজে মন দিতে পারেননি তিনি। তাই পরে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে জেহেরুল শিল্পকেই তাঁর একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নেন।
 
শিল্পের পাশাপাশি জেহেরুল রান্না করতেও ভালোবাসেন এবং নিজে রান্না করে খেতে তিনি খুবই উপভোগ করেন। ভবিষ্যতে তিনি একটি রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা করেছেন। পাশাপাশি, বর্তমানে তিনি অনেক তরুণ-তরুণীকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে জেহেরুল নিজেকে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও  নিজেকে দেখতে চান।