অনিকা মহেশ্বরী / নয়াদিল্লি
অভাবই আবিষ্কারের জননী। উত্তরপ্রদেশের জালিলপুর ব্লকের ধীনওয়ারপুরা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ জুনাইদ সাইফি তার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তার পরিবারে বহু প্রজন্ম ধরেই কাঠের শিল্পকর্মের কাজ চলে আসছে। উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পাওয়া অর্ডার অনুযায়ী তারা কাঠের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে থাকেন।
কিন্তু লকডাউনের সময় যখন অর্ডার আসা বন্ধ হয়ে গেল, তখন জুনাইদ নতুন কিছু করার কথা ভাবেন। এরপর তিনি একটি কাঠের সাইকেল ও আরও কিছু সামগ্রী তৈরি করেন। সেগুলি মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাওয়ায়, তিনি এই হস্তশিল্পের কাজটি আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বাইকের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট জুনাইদের সাম্প্রতিক এক হস্তশিল্প সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। নতুন কিছু করার প্রতি সদা উৎসাহী এই যুবকটি এবার একটি কাঠের বুলেট (মোটরসাইকেল) তৈরি করেছেন। জুনাইদ এই কাঠের বুলেটটি মাত্র ৯৫,০০০ টাকায় তৈরি করেছেন। এটি পেট্রোল চালিত এবং ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দেয়। অভিনব এই কাঠের বুলেটটি কিনতে মুম্বাই, গুজরাট ও দিল্লি থেকে জুনাইদের কাছে ক্রেতাদের অসংখ্য ফোনকল আসছে।
তবে তাঁর যাত্রাপথ মোটেই সহজ ছিল না। আসলে, জুনাইদ সাইফি সামাজিক মাধ্যমে বিদেশিদের কাঠের সাইকেল ও অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী তৈরি করতে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তখন তিনি নিজেও একটি কাঠের সাইকেল তৈরি করার কথা ভাবেন, যদিও সেই সময়ে তাঁর বাড়িতে বা গ্রামে কেউই এমন চিন্তা করতে পারেনি। গত বছর জুনাইদ ইন্টারনেট থেকে কাঠের সাইকেল তৈরি করার কৌশল শিখেছিলেন এবং বাড়িতে পড়ে থাকা মজবুত সিসম কাঠ খোদাই করে সেই সাইকেলে ব্যবহার করেন।
মোহাম্মদ জুনায়েদ সাইফির তৈরি কাঠের বুলেট
এছাড়াও তিনি কাঠের শিকল, গিটার এবং একটি বড় ঘড়িও তৈরি করেছেন। কাঠের কাজে যুক্ত বিভিন্ন উদ্যোক্তা জুনাইদের তৈরি সামগ্রী পছন্দ করতে শুরু করেছে এবং তিনি অর্ডারও পেতে শুরু করেছেন। তিনি মূলত সিসম ও পাইন কাঠ ব্যবহার করে এই সামগ্রীগুলো তৈরি করছেন। পেশায় একজন কার্পেন্টার, বিজনোর জেলার জালিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ জুনাইদ সাইফি শুধু কাঠের বুলেট তৈরি করেই থেমে থাকেননি, বুলেটের হেলমেটটিও কাঠ দিয়েই তৈরি করেছেন, যা নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত মজবুত।
জুনাইদ তৈরি করা শিকল সহ বড় ঘড়ি দেখে গুরুদ্বারা কমিটির সদস্যরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এমন একটি ঘড়ি তৈরি করে গুরুদ্বারায় স্থাপন করেন। তাঁর তৈরি কাঠের সাইকেল রাস্তায় সুন্দরভাবে চলছে। এবার তাঁর কাঠের বুলেট সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
জুনাইদ সাইফী প্রায় তিন মাসে এই মডিফাইড বুলেট বাইকটি তৈরি করেছেন। এর জন্য তাঁর প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। জুনাইদ শীঘ্রই এই বাইকটিকে বৈদ্যুতিক বাইকে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়াও, মেয়েদের জন্য বিশেষভাবে চালানো যায় এমন বাইকের অর্ডারও আসতে শুরু করেছে। এই কৃতিত্বের জন্য জুনাইদ যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছেন।
আসলে, যদি কোনো ব্যক্তির কোন কাজ করার প্রবল ইচ্ছা থাকে, তাহলে বড় কাজও সহজ হয়ে যায়। প্রতিভাবান এবং কঠোর পরিশ্রমী জুনাইদও একই রকম কাজ করেছেন।