আওয়াজ দ্য ভয়েস / নয়াদিল্লি
ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের দিনটি জামিয়া গার্লস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী জিরিশ আসলামের জীবনে স্মরণীয় হয়ে রইল। এই দিনে তিনি এমন এক সম্মান লাভ করেন, যা যেকোনো ছাত্রীর জন্য গর্ব এবং অনুপ্রেরণার বিষয়।
জিরিশকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান, যেখানে তাকে এবং ‘প্রেরণা’ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত আরও পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রীকে দেশের পক্ষ থেকে অসাধারণ স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
জিরিশ আসলামকে সংবর্ধনা দেওয়া মুহূর্তের একটি দৃশ্য
শোপিয়ানের চূড়া থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের গর্বিত যাত্রা
জম্মু-কাশ্মীরের সৌন্দর্যমণ্ডিত ও ঐতিহাসিক শোপিয়ান জেলার বাসিন্দা জিরিশ আসলাম সম্প্রতি জেলা স্তরের একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন। এই কৃতিত্বের ফলস্বরূপ তার জন্য উন্মুক্ত হয় ‘প্রেরণা’ কর্মসূচির দরজা, এক অনন্য উদ্যোগ, যা তরুণ প্রজন্মকে অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষার মাধ্যমে নেতৃত্ব, উদ্ভাবন ও জাতি গঠনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এই কর্মসূচির অধীনে জিরিশ গুজরাটের বডনগরে অবস্থিত প্রেরণা ক্যাম্পাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান, যেখানে ভারতের ১০টি ভিন্ন রাজ্য থেকে নির্বাচিত ২০ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এক সপ্তাহ ধরে একসঙ্গে ছিলেন এবং জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দেশভক্তির এক নতুন চেতনা অর্জন করেন।
জিরিশের জন্য এই অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র একাডেমিক ছিল না, বরং এটি ছিল জীবনের এক রূপান্তরকামী যাত্রা। সেখানে তিনি নানা পটভূমি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পান, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলেন এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজের পথ নির্ধারণ করতে অনুপ্রেরণা লাভ করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার গর্ব
স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিবেশ ছিল ভব্যতা ও উৎসাহে পূর্ণ। যখন জিরিশ এবং তার সহপাঠী পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা হলরুমে প্রবেশ করছিলেন, তখন তারা মন্ত্রী, বিশিষ্ট অতিথি এবং বিদেশি রাষ্ট্র দূতের মধ্যে পরিবেষ্টিত ছিলেন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্যের বার্তা।
রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রাপ্ত সংবর্ধনার একটি ছবি
জিরিশ সেই মহার্ঘ মুহূর্তের সাক্ষী হন, যখন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতি তার কাছে প্রেরণা কর্মসূচিতে তার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চান। রাষ্ট্রপতির আন্তরিক হাসি ও উৎসাহব্যঞ্জক কথাবার্তা জীরিশের মনে এক নতুন আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে।
এর পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ পান। প্রধানমন্ত্রী তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তার সাফল্যের প্রশংসা করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভকামনা জানান।
এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা
জিরিশের জন্য সবচেয়ে গভীর আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল যখন তিনি ও তার সহপাঠীরা জাতীয় সংগীতের জন্য একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই মুহূর্তের প্রতিধ্বনি, একস্বরে গাওয়া "জন গণ মন" এবং গোটা কক্ষে ছড়িয়ে পড়া দেশপ্রেমের তরঙ্গ তার হৃদয়ে এক অমোচনীয় ছাপ ফেলে।
জিরিশের কথায়, “সেই মুহূর্তে আমি সত্যিই ঐক্য, সমতা এবং গর্ব অনুভব করেছি। আমি উপলব্ধি করি যে আমরা সবাই মিলে এই দেশের আসল শক্তি।” এই অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র এক সম্মান ছিল না, বরং তার জীবনের পথ নির্ধারণে এক মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
প্রেরণা ও এক নতুন উড়ান
‘প্রেরণা’ কর্মসূচি জীরিশ ও তার মতো অনেক ছাত্রছাত্রীকে এই বিশ্বাস এনে দিয়েছে যে শিক্ষা শুধু বইপত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা জীবনের ও সমাজকে উন্নত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্বশীল নাগরিক ও ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জোগায়।
জিরিশ এখন শুধু তার নিজস্ব সম্প্রদায়ের নয়, বরং সারা দেশের তরুণদের জন্য এক আদর্শ হয়ে উঠেছেন। তার এই সম্মান এমন এক বার্তা বহন করে, যা বলে, পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সঠিক দিশায় প্রচেষ্টা থাকলে যে কোনো ছাত্র ভারতের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারে।
অন্যান্য ছাত্র - ছাত্রীদের সঙ্গে একটি ছবি
জামিয়ার গর্ব
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং জামিয়া গার্লস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল জিরিশের এই কৃতিত্বে আনন্দ ও গর্ব প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এটি শুধু জিরিশের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং জামিয়ার সেই অঙ্গীকারের ফল, যা তারা ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষা এবং জাতীয় চেতনার বিকাশে দিয়ে থাকে।
জিরিশ আসলামের এই যাত্রা, এক সাধারণ ছাত্রী থেকে ‘প্রেরণা’ কর্মসূচির এক উজ্জ্বল অংশগ্রহণকারী এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের এক সম্মানিত অতিথি হয়ে ওঠা, তাদের জন্য এক জীবন্ত উদাহরণ, যারা বড় স্বপ্ন দেখতে জানে ও সাহস রাখে তা পূরণ করার।
তার এই অভিজ্ঞতা কেবল তার নিজস্ব অর্জন নয়, বরং তাদের জন্যও এক আশার আলো ও প্রেরণার উৎস, যারা নিজেদের জ্ঞান ও কর্ম দিয়ে ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখতে চায়।