মুন্নী বেগম , গুয়াহাটীঃ
রাজ্যে কৃষি এবং পশুপালনের একটি বৃহৎ সম্ভাবনা রয়েছে। এই কথা বাস্তবে পরিণত করেছে মানকচারের কয়েকজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক। সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে কৃষি এবং পশুপালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে যুবকরা। ফাইভস্টার লাইভ স্টক জয়েন্ট ফার্মিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোগী যুবকরা কুলের খেতি এবং ছাগলের পালনকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করেছে।
এই প্রসঙ্গে ফাইভস্টার লাইভ স্টক জয়েন্ট ফার্মিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন,"২০০০ সালে আমি বি.এসসি শেষ করি। এরপর মানকাচারের সোনাপুর হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি। কিন্তু ২০১৩ সালে স্কুলটি প্রাদেশীকরণ হওয়ার পর আমার চাকরি চলে যায়। সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে আমি আমার চারজন বন্ধুর সঙ্গে বকুল (বেরি) চাষ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে আমরা ৮ বিঘা জমিতে এক ধরনের বিশেষ জাতের বকুল চাষ শুরু করি।"
জহিরুল ও তার বন্ধুরা চাষের পদ্ধতিটি ইউটিউব দেখে শিখেছিলেন। তাঁরা এক ফুট দূরত্বে একটি করে চারা রোপণ করেন। জহিরুল বলেন,"এই চাষ খুবই সহজ এবং কম খরচে হয়। একবার ফল আসার পর গাছগুলো একটু ছেঁটে দিতে হয়। ফুল ফোটার সময় পোকার হাত থেকে বাঁচাতে হরমোন স্প্রে করতে হয়।"
কৃষি ও পশুপালনে এগিয়ে যুব সমাজ
তিনি আরও জানান,"আমরা ‘কাশ্মীরি বেরি’, ‘মাল বেরি’ আর ‘ভারত সুন্দরী’ নামে তিনটি জাতের কুল গাছের চারা ২০২১ সালের মার্চ মাসে বেঙ্গালুরু থেকে কিনে এনেছিলাম। আমরা একসঙ্গে প্রায় ১৪০০টি চারা রোপণ করেছিলাম। গাছগুলো বড় হয়ে ফল ধরতে প্রায় ১১ মাস সময় লাগে। একেকটি গাছ থেকে আমরা প্রায় ২০ কেজি করে ফল পেয়েছি, মোট ১৩৫ কুইন্টাল কুল ফল সংগ্রহ করতে পেরেছি।"
জহিরুল বলেন,"বকুল চাষ খুবই লাভজনক। এর ফল মিষ্টি, রসালো ও পুষ্টিকর। এই ফল মেঘালয় এবং মানকাচারের বাজারে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বকুল বিক্রি করে আমরা প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা আয় করেছি।"তিনি আরও জানান যে এই বছর আরও বড় পরিসরে চাষ করতে তাঁরা জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ২২ বিঘা জমিতে নতুন করে ২০০০টি বকুল গাছ রোপণ করেছেন।
ফাইভস্টার লাইভ স্টক জয়েন্ট ফার্মিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড-এর সঙ্গে যুক্ত উদ্যোমী তরুণরা শুধু কুল চাষেই সীমাবদ্ধ নেই, তারা একটি ছাগলের ফার্মও চালু করেছে। প্রায় দেড় বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা এই ফার্মে বর্তমানে ছাগল পুষছে। এর মধ্যে ব্রিটেইল, যমুনা উন্নত জাতের ছাগলের পাশাপাশি স্থানীয় জাতের ছাগল রয়েছে।ছাগলগুলোর খাবারের জন্য তাঁরা প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও "নেটিয়া"নামের ঘাস চাষ করেছেন। শুধু ছাগল নয়,তাঁরা গরু ও পালন শুরু করেছেন।
সোনার ফসল হাতে তুলেছেন যুবকরা
জহিরুল ইসলাম জানান,"এখনও পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনও রকম আর্থিক বা প্রযুক্তিগত সুবিধা পাইনি। তবে জেলার কমিশনার এবং ব্লক অফিসার এসে আমাদের খামার ঘুরে দেখেছেন এবং আমাদের কাজের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা আমাদের চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ ও ফার্মে ছাগলদের পায়ে ক্ষত যেন না হয়, সে জন্য গল্ফ-ফিল্ডের জমির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।"
জহিরুল ইসলাম বলেন,"আমাদের উদ্দেশ্য শুধু নিজেরা স্বনির্ভর হওয়া নয়, বরং কৃষি ও পশুপালনের মাধ্যমে কিভাবে আরও দশজন মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলা যায়, সেটাই আমাদের ছোট্ট একটা প্রচেষ্টা। আমরা চাই, আমাদের কাজ দেখে অন্য অনেক তরুণও উৎসাহিত হোক এবং কৃষি ও পশুপালনের দিকে এগিয়ে আসুক।"তিনি আরও জানান,"ইতিমধ্যেই মানকাচরের বেশ কিছু যুবক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তারা চাষাবাদ ও পশুপালন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছে।"