আরিফুল ইসলাম , গুয়াহাটিঃ
আসামের যুব প্রজন্মের মন ও চিন্তায় ধীরে ধীরে কর্ম-সংস্কৃতির চেতনা জেগে উঠছে। কর্ম-সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়ে রাজ্যের বহু যুবক-যুবতী আজ আত্মনির্ভর হয়ে উঠছেন। যখন লাখ লাখ বেকার সরকারী চাকরির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, তখন নলবাড়ি জেলার এক যুবক ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
চাকরির আশায় সময় নষ্ট না করে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা এই যুবক হলেন নলবাড়ি জেলার ধর্মপুর সমষ্টির অন্তর্গত পাকোয়া গ্রামের পাপু আলি। তিনি নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন একটি ছোট স্যান্ডেল তৈরির কারখানা। ‘পুনা’ নামের এই স্যান্ডেল উদ্যোগটি গড়ে তুলে তিনি নিজে যেমন স্বনির্ভর হয়েছেন, তেমনি গ্রামের আরও চার-পাঁচজন বেকার যুবককেও কর্মসংস্থান দিতে সক্ষম হয়েছেন।
‘আওয়াজ–দ্য ভয়েস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাপু আলি বলেন,“অনেক বছর ধরে আমি বিভিন্ন চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছি। কর্মসংস্থানের জন্য বাইরের রাজ্যেও গিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম, এভাবে চলতে থাকলে বয়স চলে যাবে আর জীবনে কিছুই করতে পারব না। তাই আমি ঠিক করলাম, ছোট পরিসরে হলেও নিজে কিছু শুরু করব। আমার স্যান্ডেল কারখানাটি শুরু হয়েছে প্রায় দুই মাস হলো। যদি চাকরি করতাম, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম, কিন্তু তাতে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব হতো না। তাই আমি ছোট থেকেই নিজ উদ্যোগে কিছু শুরু করেছি। আমি আশাবাদী যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি করতে পারব।”
পাপু আলির 'পুনা' স্যান্ডেল
উল্লেখযোগ্য যে, ‘কর্মকে ধর্ম’ হিসেবে গ্রহণ করা এই উদ্যমী যুবকটি তাঁর স্যান্ডেল ব্যবসার জন্য আহমেদাবাদ থেকে স্যান্ডেল তৈরির মেশিন অর্ডার দিয়ে এনেছেন। স্যান্ডেলের কাঁচামাল যেমন রাবার এবং ফিতে তিনি আমিনগাঁও থেকে ক্রয় করেন। পাপু আলি জানান, তিনি দিনে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জোড়া স্যান্ডেল প্রস্তুত করেন।
আসামের বেকার যুবসমাজকে উদ্দেশ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পাপু আলি বলেন,“শুধু একটি চাকরির জন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। যারা চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগেও যেকোনো কিছু শুরু করতে পারেন। শুধুমাত্র চাকরির অপেক্ষায় বসে না থেকে আত্মনির্ভর হওয়াটাই এখন সময়ের দাবি। আমি অনেককে দেখেছি, শুধু চাকরির আশায় বসে থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে। তাই নিজে থেকে কিছু কাজ শুরু করলে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায়। আসামের তুলনায় অন্য রাজ্যগুলোর যুবক-যুবতীরা চাকরির চেয়ে ব্যবসা বা নিজস্ব কাজকেই বেশি গুরুত্ব দেয় এটা লক্ষ্যণীয়।”
বর্তমানে এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাঁর কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের স্যান্ডেল গুৱাহাটী, বরপেটা, বকসা ও নলবাড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে পাইকারি দরে সরবরাহ করা হয়। কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর চেষ্টা করে চলেছেন পাপু আলি। তিনি এখন ওই অঞ্চলের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ভবিষ্যতে তিনি ডিসপোজেবল থালাবাসনের কারখানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উদ্যোগ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। এই যুবকের এমন উদ্যোগকে অনেকেই শুভেচ্ছা ও প্রশংসা জানিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, পাপু আলির মতোই আসামের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক উদ্যমী যুবক বর্তমানে চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে নিজের পরিশ্রম ও একাগ্রতার জোরে স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। এই ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাম নলবাড়ি জেলার ঘগ্ৰাপাড়া এলাকার বড়িদতরা গ্রামের যুবক বনজিত হুসেইন। তিনি কৃষিকাজের মাধ্যমে এক বিপ্লব গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বর্তমানে তিনি রাজ্যের একজন সফল কৃষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হুসেইন আরও অনেক যুবককেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
রকমারি 'পুনা' স্যান্ডেল বিক্রির জন্য তৈরি
অন্যদিকে, নলবাড়ি জেলার মেহবুব আলি নামের আরেক যুবক বাঁশ ও বেতের শিল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। তিনি বাঁশ দিয়ে স্কুটারসহ নানা আকর্ষণীয় সামগ্রী তৈরি করেছেন। আত্মনির্ভরতার আরেকটি উদাহরণ হলেন দরং জেলার হবিবুর রহমান। তিনি ‘সেউজমুখী অ্যাগ্রো প্রডিউসার লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং কৃষকদের উৎপাদিত সামগ্রী বিদেশে রপ্তানিতে সহায়তা করছেন।