নেপালে আটকা পড়েছেন ত্রিপুরার ছেলে স্বপ্নজিত চৌধুরী

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 1 d ago
নেপালে আটকা পড়েছেন ত্রিপুরার ছেলে স্বপ্নজিত চৌধুরী
নেপালে আটকা পড়েছেন ত্রিপুরার ছেলে স্বপ্নজিত চৌধুরী
 
নূরুল হক / আগরতলা

নেপালে চলতে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে আটকা পড়েছেন ত্রিপুরার ছেলে স্বপ্নজিত চৌধুরী। জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি সেমিনারে যোগ দিতে নেপালে গেছিলেন তিনি। পুরাতন আগরতলার বাসিন্দা খোকন চৌধুরীর ছেলে স্বপ্নজিত বর্তমানে কলকাতা থেকে পি এইচ ডি করছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে নেপালে গিয়েছিলেন।
 
নেপালে শিক্ষা সেমিনারে অংশ নিতে গিয়ে বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে আটকে আছেন ত্রিপুরার আগরতলার ছেলে স্বপ্নজিৎ চৌধুরী। ২৮ বছর বয়সি স্বপ্নজিৎ চৌধুরীর বাড়ি খয়েরপুরের পুরাতন আগরতলায় চৌদ্দ দেবতা মন্দির সংলগ্ন এলাকায়। তার বাবার নাম খোকন চৌধুরী। স্বপ্নজিৎ চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মোহনপুরে ডক্টর বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ক্ষেত্রে পি এইচ ডি করছেন।
 
কলেজ থেকেই স্বপ্নজিৎ চৌধুরী সহ মোট চারজন ছাত্র গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমন্ডুতে গিয়েছিল একটি শিক্ষা সেমিনারে অংশ নিতে। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে সেই শিক্ষা সেমিনার। ৯ সেপ্টেম্বর তাদের রেলপথে নেপাল থেকে কলকাতা ফিরে আসার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে ৮ সেপ্টেম্বর রাতেই নেপালে ছাত্রগন অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেন এবং সেখানে অস্থিরতা কায়েম হয়।
 
পরবর্তীকালে সেনা শাসন জারি হলেও নেপালের পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণভাবে শান্ত হয়নি। বিভিন্ন দিকে বিক্ষোভ অগ্নি সংযোগ এবং অস্থির ঘটনা ঘটে চলছে। অস্থির পরিস্থিতিতে ৯ তারিখ পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেনি স্বপ্নজিৎ চৌধুরী সহ তার সহপাঠীরা। তারা কাঠমুন্ডুর পশুপতি মন্দিরের বিপরীত পাশে একটি বেসরকারি হোটেলে আটকে আছ। স্বাভাবিকভাবেই অন্য ছাত্রদের মত স্বপ্নজিতের পরিবারও উৎকণ্ঠায় রয়েছে। ছেলেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন এবং সরকারের কাছে সাহায্য চাইছেন স্বপ্নজীদের মা-বাবা।
 
এই বিষয়ে  স্বপ্ন জিতের বাবা খোকন চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা গেছে কলেজের তরফে শিক্ষা সেমিনার হওয়ায় তারা নেপালে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে পাসপোর্ট নিয়ে যায়নি। ভারতীয় আধার কার্ড এবং পরিচয় পত্র দেখিয়ে তারা নেপালে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে রেলপথে ফিরে আসতে না পেরে তারা চেষ্টা করেছিল বিমানের টিকেট করার। বিমানের টিকেটের মূল্য অত্যন্ত চড়া হওয়ার পাশাপাশি পাসপোর্ট সঙ্গে না থাকায় তারা বিমানে আসতে পারবেন না বলে সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
স্বপ্নজিৎ চৌধুরী সহ তার কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে নেপালে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। স্বপ্নজিৎ চৌধুরী একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন সেখানে তাদের হোটেলে ধীরে ধীরে খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে।সমস্ত কিছুর দামও দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে এবং তাদের কাছে টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আর কিছুদিন চলতে থাকলে তারা ভীষণ সমস্যায় পড়বেন। ভারত সরকার যাতে তাদেরকে অতি দ্রুত উদ্ধারের উদ্যোগ নেয় তার জন্য ভিডিও বার্তায় আবেদন জানিয়েছেন স্বপ্নজিৎ চৌধুরী। 
 
অন্যদিকে স্বপ্নজিৎ চৌধুরীর খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরাতন আগরতলা স্থিত তার বাড়িতে ছুটে যান খয়েরপুর এলাকার বিধায়ক (বিজেপি) রতন চক্রবর্তী। বিধায়ক  স্বপ্নজিতের মা বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়ে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বপ্নজিতের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে সুষ্ঠুভাবে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। এই বিষয়ে বিধায়ক রতন চক্রবর্তী সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি বিষয়টি নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডক্টর মানিক সাহার সঙ্গে কথা বলেছেন।
 
মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লিতে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কের কাছ থেকে স্বপ্নজিত চৌধুরীর ফোন নাম্বার সহ সমস্ত বিবরণ সংগ্রহ করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। বিধায়ক রতন চক্রবর্তী বলেন ত্রিপুরা সরকার এই বিষয়টিতে ভারত সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার মধ্য দিয়ে স্বপ্নজিৎকে দ্রুত দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে তৎপর রয়েছে।