কাঠমাণ্ডু
নেপালে এক নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠছে। দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পর সংঘটিত প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী কাঠমাণ্ডু। এই আন্দোলনের পেছনে এগিয়ে আসে দেশের যুব প্রজন্ম, যাদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায় জেন জেড-এর তরুণদের। গত সপ্তাহে আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে ৫,০০০-এর বেশি যুবক-যুবতী অংশ নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নির্বাচনের প্রস্তাব।
প্রাথমিকভাবে কাঠমাণ্ডুর মেয়র বালেন শাহ জনপ্রিয়তা পেয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় মনোযোগ অন্যদিকে সরে যায়। আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। খবর অনুযায়ী, সমর্থনের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার শর্তে প্রথমে তিনি ১,০০০ জনের সমর্থন চান। শেষ পর্যন্ত ২,৫০০-এরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়, যা তাকে এগিয়ে নিয়ে আসে সম্ভাব্য প্রধান প্রার্থী হিসেবে।
সভায় কুলমান ঘিসিং, যুবনেতা সাগর ধাকাল ও ধরণ মেয়র হার্কা সাম্পাং সহ আরও কয়েকটি নাম আলোচিত হয়। পাশাপাশি ইউটিউবার ‘র্যান্ডম নেপালি’র কথাও সমর্থকেরা উল্লেখ করেন। তবে তিনি নিজে বলছেন, “আমি তখনই এগিয়ে আসবো, যখন অন্য কেউ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তাব গ্রহণ করলে সুশীলা কার্কিকে প্রথমে নেপাল সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল এবং এরপর রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পাওডেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে অনুমোদনের জন্য। পরিস্থিতির গভীরতা ও রাজনৈতিক জটিলতা বিবেচনায় এটিকে বড় এক চ্যালেঞ্জ বলা হচ্ছে।
এর আগের জেন জেড-এর নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট নড়ে চড়ে ওঠে। প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্ট ভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর চালায়। এই সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারান। প্রবল উত্তেজনার মধ্যেও তরুণ প্রজন্মের এই উদ্যোগ বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
সুশীলা কার্কি, যিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন, নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন একজন সাহসী, স্বচ্ছ ও অটল ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হিসেবে। ২০১৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারী কর্তৃক প্রধান বিচারপতির পদে নিযুক্ত হন, যখন সাংবিধানিক পরিষদ নেতৃত্ব দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি।
কার্কি তার পেশাজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষিকা হিসেবে। পরবর্তীতে বিচার বিভাগে প্রবেশ করে তিনি সাহসী, যোগ্য ও অপরাধমুক্ত বিচারক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ২০০৬ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে ছিলেন, ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাড-হক বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে পরবর্তী বছর স্থায়ীভাবে প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হন। পরে ২০১৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এই প্রস্তাবিত পদক্ষেপ যেন নেপালের যুব সমাজের জন্য এক নতুন আলোচনার সূচনা। যেখানে ক্ষমতা, ইচ্ছাশক্তি আর দায়িত্ববোধ মিলিয়ে তৈরি হয় পরিবর্তনের শক্তি। সুশীলা কার্কির নাম উঠে আসা নিঃসন্দেহে এ আন্দোলনের এক অনন্য অধ্যায়।