শান্তিপ্রিয় রায় চৌধুরী
রিচা ঘোষ। এই মুহূর্তে মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে ব্যস্ত। ভারতীয় মহিলা দলের এই উইকেট কিপারের নামটা এখন সকলের কাছেই পরিচিত। বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচেই তিনি তার সাফল্য দেখিয়ে চলেছেন।
অথচ একটা সময় ছিল নিজের ব্যাট কেনার টাকা পয়সা ছিল না।সেই মেয়েটাই আজ দেশের জার্সিতে বিশ্বমঞ্চে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাংলার তথা দেশের হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও ঝুলন গোস্বামীর পর বিশ্বকাপে খেলছেন শিলিগুড়ির ২২ বছরের মেয়ে রিচা ঘোষ। ভারতীয় মহিলা দলের এই উইকেটকিপার ব্যাটারের পথচলা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। সমস্ত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে রিচা আজ বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত।
খেলার ময়দানে রিচা ঘোষ (ফাইল)
ক্রিকেটের প্রতি রিচা ঘোষের আগ্রহ দেখে বাবা মানবেন্দ্র তাকে শিলিগুড়ির একটি ভালো ক্রিকেট প্রশিক্ষণ সেন্টারে ভর্তি করান। মানবেন্দ্র নিজেও ক্রিকেট খেলতেন, কিন্তু খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারেননি। তাই মেয়েকে ক্রিকেটে আনতে তিনি নিজেও দারুন আগ্রহী হন। এরপর রিচাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
"রিচা তার জুনিয়র বেঙ্গল ক্রিকেটের দিন থেকেই নির্ভীক ক্রিকেট খেলে আসছে। সে রানের জন্য ক্ষুধার্ত, উইকেটের পিছনে ভালো ক্যাচ নেয় এবং এমনকি দ্রুত বলও করে," এমন মন্তব্য করেন বেঙ্গল মহিলা দলের প্রধান কোচ ঋতুপর্ণা রায়। রিচা ২০১২-১৩ সালে তার ক্লাবের হয়ে প্রতিযোগিতা করার সময় সিনিয়র বেঙ্গল ক্যাম্পে নির্বাচিত হন।
১১ বছর বয়সে রিচা বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে রিচা সুযোগ পায় অনূর্ধ্ব-২৩ এবং সিনিয়র দলে। ২০১৮ সালে রিচা বাংলার বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন। ২০২০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার আগে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি ত্রি-দেশীয় সিরিজে অভিষেক হয় রিচার।
রিচা ঘোষ (ফাইল)
১৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান এবং উইকেটরক্ষক রিচা ঘোষ বর্তমানে ভারতের হয়ে বেশিরভাগ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। উভয় ফর্ম্যাটেই তিনি তার স্থান পাকাপোক্ত করেছেন এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং অ্যাক্রোবেটিক কিপিংয়ের জন্য তাকে ভারতের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রিচা ঘোষ চলতি বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পাঁচ বা তার বেশি ডিসমিসাল করেছেন। তিনি একজন ভারতীয় মহিলা উইকেটরক্ষকের ওয়ানডে ইনিংসে সর্বাধিক ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ডও ভেঙেছেন। রেকর্ড বুকে নাম লেখানোর পর রিচা বলেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি আমার আইডল।
রিচাকে উদযাপন করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ নেমে পড়েছেন, যিনি তার বিশ্বকাপ অভিষেকে তার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। এত অল্প বয়সে রিচা ঘোষ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে মেধাবী এবং প্রশংসিত ক্রীড়াবিদদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
খেলার ময়দানে রিচা ঘোষ (ফাইল)
উল্লেখ্য, মহিলা প্রিমিয়ার লিগে রয়েল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরু তাঁকে ২০২৩ সালে নিয়েছিল। তিনি পেয়েছিলেন ১.৯০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে বেঙ্গালুরুর হয়ে ভাল পারফরম্যান্স তুলে ধরেছিলেন রিচা। দলের তৃতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি মেয়েদের বিগ ব্যাশ লিগ ও উইমেন্স হান্ড্রেডে খেলেছেন রিচা।
দেশের জার্সিতে রিচা ৬৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ১০৬৭ রান। এ ছাড়া ৪৭টি আন্তর্জাতিক ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন রিচা। ওডিআই ম্যাচে করেছেন ১০৭৩ রান। সর্বাধিক ৯৬। এ ছাড়া ভারতের হয়ে টেস্টে ২টি ম্যাচ খেলেছেন রিচা। সেখানে প্রাপ্তি ১৫১ রান। সর্বাধিক ৮৬। ধৈর্য, অধ্যবসায় ও কঠোর মনোভাব অটুট রেখে আজ রিচা ঘোষ ভারতের মহিলা ক্রিকেটে উজ্জ্বল নাম।