কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর হ্রদকে দূষন মুক্ত রাখতে এখনও একাই লড়াই করছেন সুমিতা ব্যানার্জি
শান্তি প্রিয় রায়চৌধুরী
কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর একটি জাতীয় হ্রদ। ১৯৯৭ সালে রবীন্দ্র সরোবর হ্রদকে 'জাতীয় হ্রদ' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সরোবর প্রাত ভ্রমণকারীদের প্রিয় স্থান। প্রতিদিন বহু মানুষ প্রাত ভ্রমণ করতে এখানে আসেন। দুই দশক আগে, সুমিতা ব্যানার্জি নামে একজন প্রাত ভ্রমণকারী হিসেবে এই হ্রদে আসেন। তারপর থেকে এই হ্রদকে তিনি ভালোবেসে ফেলেছেন। বলা যায়, এই হ্রদের গাইড এখন তিনি।
কে এই সুমিতা ব্যানার্জি:
তিনি একজন স্বীকৃত নাগরিক-সংরক্ষণবাদী এবং কর্মী, যিনি আইন ও গণমাধ্যমের সহায়তায় নাগরিকদের সংগঠিত করেন এবং হ্রদকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য মিটিং মিছিল করেন আর কর্তৃপক্ষ ও নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
রবীন্দ্র সরোবরের পাশে সুমিতা ব্যানার্জীর একটি ছবি
১৯৯০-এর দশকে কলকাতায় এই দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় রবীন্দ্র সরোবরের সাথে মিসেস ব্যানার্জী তার প্রথম বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন- "সেই সময় হ্রদটির কোনও রক্ষণাবেক্ষণই হতো না। এই সুন্দর হ্রদটি ভ্রমণকারীদের কাছে ডাস্টবিন ইয়ার্ডে রূপান্তরিত হচ্ছিল। তাছাড়া প্রাত ভ্রমণকারীরা যে জঘন্য কাজটা করতেন তা হল, মানুষ এবং তাদের পোষা কুকুর উভয়ের জন্যই হ্রদটি মলত্যাগের জন্য একটি উন্মুক্ত জায়গা ছিল! সকালের ভ্রমণকারীদের জন্য হ্রদের চারপাশে হাঁটা কঠিন ছিল। দুর্গন্ধ ছড়াত। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। আমার হ্রদে আসার দিন থেকেই আমি হ্রদটিকে বাঁচানোর জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম।"
মেঘালয়ের বর্তমান রাজ্যপাল তথাগত রায়ও হ্রদে প্রাত ভ্রমণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। "তিনি আমাকে সকালের হাঁটতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০০ জন স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে এবং বর্তমান সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন জমা দিতে বলেছিলেন। আমি একশ জন নয় ১০০০ জনেরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ এ দিকটা দেখেছে এবং কিছু করার চেষ্টা করেছে। সেই সময় আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমাদের ছোট্ট পদক্ষেপ হ্রদটিকে তার পরিবেশগত ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে।"
রবীন্দ্র সরোবর রক্ষার জন্য সংঘটিত আন্দোলনের একটি দৃশ্য
প্রতিদিন হ্রদ দেখার জন্য মিসেস ব্যানার্জি ভোর সাড়ে পাঁচটায় আসেন:
হ্রদ দেখার জন্য মিসেস ব্যানার্জি প্রতিদিন ভোর ৪.৩০ টায় ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিমি হেঁটে ভোর ৫.৩০ নাগাদ হ্রদে আসেন। হাতে তার থাকে কাঠের লাঠি।তিনি দুপুর ১২.৩০ পর্যন্ত হ্রদ এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। মাঝে মাঝে সন্ধ্যাতেও হ্রদ এলাকা ঘুরাঘুরি করতে আসেন।হকার এবং সাধারণ মানুষ এই স্থানে আবর্জনা ফেলেনl তাদের বিরুদ্ধে আজও লড়াই করছেন এবং সবসময় সরকারি কর্মকর্তা এবং হ্রদ নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
হ্যাঁ, যেটা বলা হয়নি তাহল মিসেস ব্যানার্জি বেশ কয়েকটি শক্তিশালী লবি এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, উচ্চ আদালতে তার বিরুদ্ধে চারটি মিথ্যা ফৌজদারি মামলার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, মৃত্যুর হুমকির ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং হ্রদটিকে বাঁচাতে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করেছেন, সবই তার নিজের খরচে।
রবীন্দ্র সরোবরের একটি ছবি
১৯৯৭ সালে জাতীয় হ্রদএর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এটি এখন ভারত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের জাতীয় জলাভূমি সংরক্ষণ কর্মসূচির সাথে একীভূত হয়েছে।
সুতরাং বূহত্তর মানুষের কাছে এটাতো একটা গৌরবের বিষয়। মিসেস ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আপনারা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সবাই এগিয়ে আসুন হ্রদটিকে দূষণ মুক্ত রাখতে।