সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়া অঙ্গীকারের বিপরীতে ইসলাম শেখায় যে প্রকৃত পরিবর্তন হৃদয় থেকে শুরু হয়। যখন উদ্দেশ্য সৎ হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দেশিত হয়, তখন সাধারণ কাজও উপাসনায় পরিণত হতে পারে এবং দৈনন্দিন লক্ষ্যগুলো স্থায়ী আধ্যাত্মিক উন্নতির উৎস হয়ে ওঠে।
প্রতীকী ছবি
ইসলামে উদ্দেশ্যকে কেন্দ্রীয় স্থান দেওয়া হয়েছে। হজরত মহম্মদ (সা.) বলেছেন: “কর্মের বিচার উদ্দেশ্য দ্বারা হয়, এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী পুরস্কৃত হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
এই শক্তিশালী বক্তব্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইসলামিক দৃষ্টিকোণে সফলতা শুধুমাত্র বাহ্যিক ফলাফলের দ্বারা মাপা যায় না। একই কাজ দুইজন মানুষ করতে পারে, কিন্তু তাদের পুরস্কার সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে, যা নির্ভর করে তাদের উদ্দেশ্যের উপর। উদ্দেশ্য মানুষকে জীবন, দিশা এবং মূল্য প্রদান করে।
ইসলামে উদ্দেশ্য সর্বদা উচ্চস্বরে বলা হয় না; এটি হৃদয়ে বাস করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করা, সৎ কাজে নিয়োজিত থাকা এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহর নির্দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সাহসী সিদ্ধান্ত। সৎ উদ্দেশ্যের মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজ, পড়াশোনা, পরিবারের যত্ন নেওয়া, এমনকি বিশ্রাম নেওয়াও উপাসনার অংশ হতে পারে।
উদ্দেশ্যের একটি বড় শক্তি হলো এটি স্পষ্টতা এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে। যখন বিশ্বাসের সঙ্গে উদ্দেশ্য যুক্ত থাকে, বিপর্যয়ও সহজে আত্মাকে ভাঙতে পারে না। একজন বিশ্বাসী বুঝতে পারে যে, সফলতা কেবল ফলাফলের মাধ্যমে নয়, প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। লক্ষ্য পুরোপুরি পূর্ণ না হলেও সৎ উদ্দেশ্য নিজেই পুরস্কার এবং হৃদয়ের শান্তি প্রদান করে।
প্রতীকী ছবি
উদ্দেশ্য কাজকে অহংকার, প্রতিযোগিতা এবং বস্তুগত আবেশ থেকে মুক্ত করে। যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করা হয়, তখন অন্যের সঙ্গে তুলনা করার কোনো প্রয়োজন থাকে না। এই অন্তরীণ স্বাধীনতা বিশ্বাসীদের নম্রতা, ধৈর্য এবং আশাবাদী মনোভাব বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ইসলাম নতুন বছরকে বিশেষভাবে ধর্মীয়ভাবে উদযাপন করে না, তবে সবসময় স্ব-দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করে। নতুন বছরের লক্ষ্য স্থির করার সময়, ইসলাম বিশ্বাসীদের কেবল বস্তুগত সাফল্যের দিকে নয়, উচ্চতর উদ্দেশ্যের দিকে মনোযোগ দিতে শেখায়। ক্যারিয়ার বৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, যদি এগুলো উচ্চ উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তবে এগুলো গভীর অর্থ লাভ করে।
একটি অর্থবহ ইসলামিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে শুরু হয়:
কেবল মর্যাদার জন্য নয়, অন্যের উপকারের জন্য জ্ঞান অর্জন করা।
ধৈর্য, সততা এবং মমতা প্রতিফলিত করতে চরিত্র উন্নয়ন করা।
ছোট ছোট, নিয়মিত কাজের মাধ্যমে উপাসনা শক্তিশালী করা।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে অন্যের সেবা করা।
এমন লক্ষ্য বাস্তবসম্মত, নমনীয় এবং আধ্যাত্মিক ভিত্তিক। ইসলাম নিয়মিততা ও সামঞ্জস্যকে মূল্য দেয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো নিয়মিতভাবে করা ছোট কাজগুলো।
প্রতীকী ছবি
লক্ষ্য নির্ধারণ করাই যথেষ্ট নয়; এগুলোকে প্রচেষ্টা, নামাজ এবং আল্লাহর উপর আস্থা (তাওয়াক্কুল) দিয়ে সমর্থন করতে হয়। ইসলাম বিশ্বাসীদের দায়িত্বশীলভাবে পরিকল্পনা করতে শেখায়, একই সঙ্গে স্বীকার করে যে চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। এই ভারসাম্য অহংকার ও বাধার মুখে হতাশা থেকে হৃদয়কে রক্ষা করে।
উদ্দেশ্য স্থির নয়; এটিকে পুনঃনবীকরণের প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে প্রেরণা কমতে পারে বা সংসারিক কামনার সঙ্গে মিশতে পারে। ইসলাম নিয়মিতভাবে বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য পুনর্মূল্যায়ন, শুদ্ধি এবং বিশ্বাসের সঙ্গে পুনরায় সংহত করার জন্য উৎসাহিত করে। এই নিয়মিত নবীকরণ কাজকে অর্থবহ রাখে এবং আধ্যাত্মিক ক্লান্তি কমায়।
তাহলে, নতুন বছর কেবল তারিখ বদল নয়; এটি হৃদয় সতেজ করার সুযোগ। ক্ষতিকারক অভ্যাস পরিহার করা, আশা নবীকরণ করা এবং নতুন উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ।