মাদানীর আবেদন: বিলাসবহুল বিয়ে নয়, শিক্ষায় সম্পদের বিনিয়োগ হোক

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 4 d ago
আওয়াজ-দ্য ভয়েস-এর প্রধান সম্পাদক আতির খানের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে  মৌলানা মাহমুদ মাদানী
আওয়াজ-দ্য ভয়েস-এর প্রধান সম্পাদক আতির খানের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে মৌলানা মাহমুদ মাদানী
 
নয়া দিল্লী

জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের সভাপতি মৌলানা মাহমুদ মাদানী ভারতীয় মুসলমানদের আহ্বান জানিয়েছেন অন্ততঃ আগামী ২০ বছর বিলাসবহুল বিয়ের পরিবর্তে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করার জন্য। আগের মতোই তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন যে মুসলমানদের সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য শিক্ষার ওপর একাগ্র মনোযোগ দিতে হবে।
 
আওয়াজ-দ্য ভয়েসের প্রধান সম্পাদক আতির খান-এর সঙ্গে হওয়া এক আন্তরিক সাক্ষাৎকারে মাদানী বলেন যে ভারতীয় মুসলমানেরা অনেক সাফল্য অর্জন করলেও প্রতিটি শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে এবং সমাজ যখন শিশুদের শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি শুরু করবে, তার আগেই তাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।
 
উল্লেখযোগ্য যে জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ (JUH) ধর্মীয় ভিত্তিতে ভারত বিভাগের বিরুদ্ধে ছিল। সেই সময়ের ইসলামি পণ্ডিতদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করাটা দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় বিপর্যয় ছিল।
 
মাহমুদ মাদানী ভারত সফরের সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররফের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি মুশাররফকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন পাকিস্তান সবসময় ভারতীয় মুসলমানদের বিষয়টিকে উত্থাপন করে। পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতিকে অতিথিদের সামনে এক সমাবেশে ভাষণ দিয়ে মাদানী বলেন যে ভারতীয় মুসলমানেরা ভারতীয় সংবিধানের অধীনে তাদের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে সক্ষম, যা তাদের সম অধিকার প্রদান করে।
 
ভারতীয় মুসলমানদের প্রসঙ্গে আতির খানের কাছে তিনি বলেন, "আমরা যদি এগিয়ে চলছি, তবে তার পিছনে দেশের বড় ভূমিকা আছে। তাদের সহায়তা ছাড়া সেটা সম্ভব হত না। আজ আমরা যে অবস্থানে আছি তা আমাদের ভাই-বোনদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হত না। কিন্তু এখন আমাদের আরও বেশি সমর্থনের প্রয়োজন, কারণ আমরা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারিনি যেখানে আমাদের থাকা উচিত।"
 

ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থার বিষয়ে মাদানী বলেন যে ভারত গঠনে মুসলমানদেরও অবদান রয়েছে এবং তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ভারতের দায়িত্ব রয়েছে। “মুসলমান যদি নিজেদের জন্য কিছু অর্জন করছে, তবে তারা দেশের সেবায়ও অবদান রাখছে। স্বাধীনতার পরে যখন দেশ বলিদান চাইছিল, তখন মুসলমানরা পিছিয়ে ছিল না; তারা আদর্শ দেখিয়েছিল।”

পাহলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর দেশবাসী যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে তিনি সকল ভারতীয়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছেন।
 
মাদানী স্মরণ করিয়ে দেন যে স্বাধীনতার পরে ভারতের ৯৯ শতাংশ শিক্ষিত ও সফল মুসলমান পাকিস্তানে গিয়ে স্থায়ী হয়েছিলেন, অথচ তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষিত মুসলমানেরা ভারতের মাটিতেই থেকে যান। "পাকিস্তানে শিক্ষিত মুসলমানের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে, কিন্তু আজ তারা কোথায়, আর ভারতের মুসলমানেরা কোথায়?" তবু দেশে মুসলমানদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
 
মাদানী স্পষ্ট করেছেন যে "জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ" শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র ভারতের জন্য। তিনি বলেন, “দেশের জন্য প্রভাবশালী দশটি সংগঠনের তালিকা তৈরি করলে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ অবশ্যই সেখানে থাকবে। কারণ এটি একটি মুসলিম সংগঠন। তাদের দায়িত্ব হলো মুসলমানদের হয়ে কথা বলা এবং তাদের যত্ন নেওয়া।”
 
মাদানী আরও বলেন যে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুসলিম এবং বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের প্রতি যে মনোভাব রাখছেন, তা তাকে ব্যথিত করছে। তিনি অভিযোগ করেন যে এটি বৈষম্যমূলক এবং অপমানজনক।