পরিবেশবান্ধব ধর্মীয় সম্মেলন: ভোপালের আলমি ইজতেমা গড়ছে এক নতুন দৃষ্টান্ত

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 24 d ago
ভোপালের আলমি ইজতেমা গড়ছে এক নতুন দৃষ্টান্ত
ভোপালের আলমি ইজতেমা গড়ছে এক নতুন দৃষ্টান্ত
 
গুলাম কাদির / ভোপাল

বিশ্বের তাবলিগি ইজতেমাগুলোর মধ্যে ভোপালের আলমি ইজতেমা বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু এ বছর এই বিশাল ধর্মীয় সমাবেশ শুধুমাত্র ইমানি দাওয়াত ও নসিহতের জন্য নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ ও শূন্য-বর্জ্য সমাজ গঠনের এক অভিনব বার্তা নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইটখেড়িতে আয়োজিত এই ৭৮তম ইজতেমার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘জিরো ওয়েস্ট পলিউশন’, যা ধর্মীয় দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতারও প্রতীক হিসেবে দাঁড়াবে।

আজ দেশের বহু শহরে দূষণের কারণে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে, যার ফলে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। এই গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আলেমগণ (ধর্মীয় পণ্ডিতরা) আল্লাহ, রসুল, নামাজ, দোজখ-জান্নাত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বয়ান দেওয়ার পাশাপাশি ইজতেমায় আগত দেশ-বিদেশের প্রায় ১০ থেকে ২০ লক্ষ মুসলমানকে পরিবেশ দূষণ রোধে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন করবেন।
 
ভোপালের আলমি ইজতেমার প্রস্তুতি
 
‘জিরো ওয়েস্ট পলিউশন’ অভিযানে সফলতা আনার জন্য আয়োজকরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ইজতেমা প্রাঙ্গণে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, গ্লাস ও পানির পাউচ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। আয়োজক কমিটি কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, এমনকি বিক্রেতাদেরও সতর্ক করা হয়েছে যে তারা যেন কোনোভাবে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ নীতি লঙ্ঘন না করে, অন্যথায় তাদের পণ্য গুটিয়ে নিতে বলা হবে। পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও করা হচ্ছে।
 
পানীয় জলের জন্য বোতলজাত জল সরবরাহ করা হবে, তবে ইজতেমা শেষে সেই বোতলগুলো সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহারের (রিসাইকেল) জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যবহৃত পানি পরিশোধন করে কৃষিকাজে ব্যবহারের উপযোগী করে কাছাকাছি খেতে সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
 
এমনকি চায়ের পাতা ও অন্যান্য খাদ্যবর্জ্য শুকিয়ে তা স্থানীয় বাগানে সার (কম্পোস্ট) হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য কেবল উপস্থিতদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা নয়, বরং অন্যান্য বৃহৎ আয়োজনের জন্যও একটি আদর্শ উদাহরণ স্থাপন করা। আয়োজকদের লক্ষ্য, এই শূন্য-বর্জ্য উদ্যোগ একদিন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পাক।
 
ইজতেমা কমিটি নিশ্চিত করছে যে এই বিশাল আয়োজনটি পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধবভাবে সম্পন্ন হয়, যাতে ভোপালের পরিচ্ছন্নতা র‌্যাঙ্কিং উন্নত হয় এবং শহরটি দেশের বাকি অংশের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে ওঠে।ইজতেমার ধর্মীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতিরও সুন্দর প্রকাশ ঘটবে। ইজতেমা কমিটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর উমর হাফিজ জানিয়েছেন, ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার আসরের নামাজের পর ৩০০টি দম্পতির দেহেজ-মুক্ত (পণবিহীন) বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে।
 
ভোপালের আলমি ইজতেমা উপলক্ষে ব্যবস্থা
 
নিকাহর জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে, এবং নিরাপত্তার কারণে বর-কনে ও তাদের অভিভাবকদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) সঙ্গে আনতে হবে। হাজিরদের সুবিধার জন্য এখানে অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে নাস্তা, পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
 
যেখানে বাজারে এক লিটার পানির বোতল ২০ টাকায় মেলে, ইজতেমায় সেটি মাত্র ৬ টাকায় পাওয়া যাবে। তেমনি দোকানগুলোতে ২০ টাকায় নাস্তা এবং ৬০ টাকায় পরিপূর্ণ খাবার পাওয়া যাবে। এছাড়া হাজিরদের ঘুমানোর জন্য গদি, এবং গরম পানি দিয়ে গোসল ও ওজুর ব্যবস্থাও থাকবে। ইজতেমার সমাপ্তি হবে ১৭ নভেম্বর বিশেষ দোয়া, দু’আ-এ-খাস,এর মাধ্যমে। এই বিশাল ধর্মীয় সমাবেশে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সমাগমের আশঙ্কায় পুলিশ প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ও যানবাহন ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নিয়েছে।
 
গ্রামীণ এসপি রামশরণ প্রজাপতি জানিয়েছেন, ইজতেমা চলাকালীন প্রায় ৪ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তার জন্য ১ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে এবং ড্রোনের মাধ্যমে জনসমাগমের ওপর নজরদারি করা হবে। আয়োজক স্থানের আশেপাশে ১৬টি অস্থায়ী পুলিশ চৌকি তৈরি করা হচ্ছে, পাশাপাশি রেলওয়ে স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মেও অতিরিক্ত চৌকি স্থাপন করা হবে। ডায়াল-১১২ টিম নিয়মিত টহল দেবে।
 
জল সরবরাহের ব্যবস্থা
 
নগর নিগমের পক্ষ থেকে ছয়টিরও বেশি দমকল দল ও ফায়ার ব্রিগেড মোতায়েন করা হবে, এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জল সরবরাহের জন্য ১,০০০-রও বেশি কর্মচারী নিয়োজিত থাকবেন। মেট্রো নির্মাণ কাজের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। মেট্রো নির্মাণ এলাকার ব্যারিকেডগুলো সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে।
 
যানবাহনের জন্য ৬৪টি পার্কিং এলাকা তৈরি করা হয়েছে। অন্য জেলা থেকে আসা গাড়ির জন্য আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে কোনো একটি রাস্তায় অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। এইভাবে ভোপালের আলমি ইজতেমা শুধু ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্বই পালন করছে না, বরং পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও ‘শূন্য-বর্জ্য’ শহর গঠনের লক্ষ্যে অগ্রসর হয়ে দেশের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।