ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতির মিসাল: পাঞ্জাবের বন্যার্তদের পাশে জামাত-এ-ইসলামি হিন্দ

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 3 d ago
পাঞ্জাবের স্থানীয়দের সাথে জামাত-ই-ইসলামি হিন্দের জাতীয় সেক্রেটারি মৌলানা শফি মাদানী
পাঞ্জাবের স্থানীয়দের সাথে জামাত-ই-ইসলামি হিন্দের জাতীয় সেক্রেটারি মৌলানা শফি মাদানী
 
নয়া দিল্লী

পাঞ্জাবে বন্যা প্রবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানে জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের পর এবার জামাত-এ-ইসলামি হিন্দ (জিহ)ও এগিয়ে এসেছে। জিহ, যা দেশের অন্যতম প্রধান মুসলিম সংস্থা, শুধুমাত্র ত্রাণ সামগ্রী প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা একটি ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রণয়ন করছে যাতে বন্যায় বিধ্বস্ত পাঞ্জাব পুনরায় স্বাভাবিক পথে ফিরে আসতে পারে।

বর্তমানে এই বন্যা গৃহ, গ্রাম, ক্ষেত ও সড়ক নষ্ট করেছে এবং ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামো ও সম্পত্তির পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন তৈরি করেছে। এই উদ্দেশ্যে, জামাত-এ-ইসলামি হিন্দের একটি উচ্চপর্যায় প্রতিনিধি দল সম্প্রতি পাঞ্জাবের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছে।
 
জিহ সদস্যরা দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য মাটির পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন।জামাত-এ-ইসলামি হিন্দের জাতীয় সম্পাদক মৌলানা শাফি মাদনি সুলতানপুর লোধির সংগ্রা ও বাউপুর জাদিদ গ্রামে প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
 
এই এলাকায় বন্যার কারণে সৃষ্টি হওয়া ধ্বংসযজ্ঞ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। পাঠানকোট জেলায় সুন্দর চক ও বাহাদুরপুর গ্রামেও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতি ছিল কলিয়া গ্রামে, যেখানে বন্যায় ৩০টির বেশি কংক্রিটের বাড়ি ধুয়ে গিয়েছিল।
 
এই বিপর্যয়ে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে তিনটি নিরপরাধ ভাইবোন এবং তাদের ৭৫ বছর বয়সী দাদী অন্তর্ভুক্ত। এই মর্মান্তিক ঘটনা হৃদয়বিদারক এবং প্রমাণ করে যে বন্যা শুধু সম্পত্তিই নয়, মানুষের জীবনকেও প্রভাবিত করে।
পরিদর্শনের সময়, প্রতিনিধিদল শিখ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তারা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময় করেন যাতে তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায়। গ্রামবাসীরা খাদ্য, পরিচ্ছন্ন পানীয় জল, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সুবিধার অভাবের কথা জানান।
 
জামাত-এ-ইসলামি হিন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা ‘সোসাইটি ফর ব্রাইট ফিউচার’ সংগঠনের সঙ্গে মিলিতভাবে এই এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তারা বিতাড়িত পরিবারগুলিকে খাদ্য কিট, ঔষধ ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী বিতরণ করছে।
 
মৌলানা শাফি মাদনি পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "বন্যার শিকারদের কষ্ট নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তিত। জামাত-এ-ইসলামি হিন্দ তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মিলিতভাবে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং পুনর্বাসন সহ সকল ধরনের মৌলিক সহায়তা প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যতক্ষণ না স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি ফিরে আসে।"
 
সংস্থাটি বিশ্বাস করে যে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক ত্রাণই যথেষ্ট নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রণয়ন করা আবশ্যক। মাওলানা মাদনি বলেন, "জামাত-এ-ইসলামি হিন্দ বন্যার প্রভাবিত সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে এবং তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করবে।" তিনি সরকারকে দ্রুত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে, অবকাঠামো উন্নয়ন করতে এবং প্রভাবিত পরিবারগুলির জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করেন।
 
এই সংকট মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মাওলানা মাদনি সাধারণ জনগণ ও সুধীজনকে এগিয়ে এসে এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
 
জামাত-এ-ইসলামি হিন্দের এই পদক্ষেপ মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সমগ্র সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। এটি নির্দেশ করে যে দুর্যোগে বিভক্ত না হয়ে সব সম্প্রদায় একজোট হয়ে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা উচিত। এই সংগঠন শুধু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বন্যার এই অন্ধকারে আশা ও ভ্রাতৃত্বের আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে।