সতীশ কুমার শৰ্মা
প্ৰখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন এবং ভারতের প্রাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰী জওহরলাল নেহরুর মধ্যে সামান্য মিল ছিলনা। একজন ছিলেন বিজ্ঞানী যিনি সময় এবং স্থানের ভিত্তিতে বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড কি করে তৈরী, হয়েছিল তার মহান রহস্য উন্মোচন করেছিলেন এবং ভর-শক্তি রুপান্তরের এটা মাৰ্জিত ও সরল সমাধান দিয়েছিলেন। অন্যজন ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ, জননেতা ও একজন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী, তিনি ইতিহাসের পদযাত্ৰাতে পথ হারিয়েফেলা এক মহান দেশকে ফের আবিষ্কার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
কিন্তু দুজনেই মানব প্ৰকৃতির দুষ্টতাকে সামনের থেকে দেখেছিলেন এবং নিৰ্যাতন ও ঔপনিবেশিকতার বশবৰ্তী হবার সন্মুখীন হয়েছিলেন, দুজনেই শান্তিবাদী ছিলেন এবং দুজনে বিশ্বাস করতেন রাজনীতি বা ধৰ্ম নয়, বরঞ্ছ বিজ্ঞানে মানবতাকে দুৰ্দশার থেকে পরিত্রাণ দিতে সক্ষম। মজার কথা দুজনেই একে অপরকে কোনদিন দেখা বা সাক্ষাৎ করেননি তারপরেও কিন্তু একজন অন্যজনকে ভুয়শী প্ৰশংসা করেছিলেন।
এর জন্য ১৯৪৭ সালে জিয়নিষ্ট (Zionist) নেতারা আইনষ্টাইনকে রশি দিয়ে বেধে ‘অলৌকিক কাজ’ করে ভারতকে রাস্ত্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইহুদী রাষ্ট্ৰ সৃষ্টির জন্য ভোট দেবার পক্ষে দাড় করিয়েছিল । আইনষ্টাইন নিজেই ইহুদী হিসেবে নিৰ্যাতনের সন্মুখীন হয়েছিলেন। প্ৰথম বিশ্বযুদ্ধর পরে জাৰ্মানী এবং ইউরোপের কিছু অংশে ইহুদী বিরোধী প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার জন্য তিনি জাৰ্মানী ত্যাগ করতে হয় ।তিনি আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্বর জন্য নোবেল পুরস্কার আংশিকভাবে অস্বীকার করেছিলেন।
তথাপি আইনষ্টাইন শুরুতে কোনো কঠোর জিয়নিষ্ট ছিলেন না। ১৯৩৮সালে তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, যে তিনি সীমান্ত, সেনাবাহিনী এবং কিছু পরিমাণে লৌকিক ক্ষমতা থকা ইহুদী রাষ্ট্ৰ গঠনের চেয়ে ইহুদী এবং আরবদের শান্তিতে এক সাথে বসবাস করার পক্ষপাতী। তারজন্য ইহুদী ধর্মের আভ্যন্তরীণ ক্ষতি হবে বলে তিনি আশংকা করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি ইজরায়েলের প্ৰবল সমৰ্থক হয়ে পড়েন ।যদিও ১৯৫২ সালে তিনি ইজরায়েলের দ্বিতীয় রাষ্ট্ৰপতি হবার প্ৰস্তাব নাকচ করে দেন।
প্ৰখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন এবং ভারতের প্রাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰী জওহরলাল নেহরু
নেহরু তাঁর ‘The Glimpses of World History’ নামের বইতে ইহুদীদের বিষয়ে লিখেন ও তাঁদের নিৰ্যাতন এবং হ’ল’কাষ্টকে নিন্দা করেছিলেন। তথাপিও তিনি ভারতের আইনষ্টাইনের ইজরায়েলের জন্য ভোট দেবার প্ৰতিশ্ৰুতি দেননি।১৯৪৭ সালের ১১ জুলাই প্রদান করা উত্তরে তিনি ইহুদীদের প্ৰতি সহানুভূতি প্ৰকাশ করেছিলেন কিন্তু তিনি আরবদের দুৰ্দশাকে উপেক্ষা করতে পারেন না বলে জানান।
ইজরায়েল সৃষ্টির পথ মুক্ত করতে পেলেষ্টাইন বিভাজনের জন্য ১৮১ (II) নং প্ৰস্তাবের উপরে ভোটদান ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকা এবং ইউ এস এস আর সহ(রাশিয়া) ৩৩ সদস্য রাষ্ট্ৰ সপক্ষে ভোটদান করে ও ১০টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে। বিপক্ষে ভোট দেওয়া ও প্ৰস্তাবের মধ্যে ৩টি দেশ ছিল অইসলামিক দেশ–কিউবা, গ্ৰীস এবং ভারত।
এই ভোটের মাধ্যমে ভারত বিশ্বকে এক বাৰ্তা প্ৰেরণ করেছিল যে যদি আৰ্থিক এবং সামরিকভাবে দুৰ্বল ও এখনো প্রজাতন্ত নয়, তথাপি বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলোকে অবজ্ঞা করে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নীতিগত স্থিতি গ্রহন করতে সক্ষম।
তারপরেও কিন্তু আইনষ্টাইন ও নেহরুর বন্ধুত্ব কম হয়ে যায়নি। নেহরু ১৯৪৯ সালের ৫ নভেম্বরে তাঁর প্ৰিন্সটনের ঘরে আইনষ্টাইনকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পান ।তিনি ‘ডিস্কভারী অফ ইণ্ডিয়া’ নামের নিজের গ্ৰন্থটি উপহার হিসাবে প্রদান করেন । ১৯৫০ সালের ১৮ ফেব্ৰুয়ারীতে আইনষ্টাইন নেহরুকে গ্ৰন্থটির প্রশংসা করেন । তিনি গান্ধী ও তাঁর স্বাধীনতার অহিংস সংগ্ৰামের জন্য প্ৰশংসা করে এভাবে লিখেন, “বাইরের থেকে অত্যাচারের চাপে পরেও বস্তুনিষ্ঠ সমঝোতার সংরক্ষণের জন্য চালিয়ে যাওয়া আভ্যন্তরীণ সংগ্ৰাম এবং অন্তৰ্নিহিতভাবে ক্ষোভ ও ঘৃণার শিকার হবার বিরুদ্ধে সংগ্ৰাম বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য হতে পারে।”