কাশ্মীরে সফলতার সংজ্ঞা বদলানো এক ১৬ বছরের তরুণ উদ্যোক্তা

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 d ago
জাহিন আসায়ী
জাহিন আসায়ী
 
আওয়াজ দ্য ভয়েস / নতুন দিল্লি

যখন কাশ্মীরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টাইমলাইন নিখুঁত নম্বর ও বিজয়ের গল্পে ভরে উঠেছিল, তখন এক ছেলের গল্প নিঃশব্দে আলোচনায় ছিল। সে কত পয়েন্ট পেল, তা গুরুত্বপূর্ণ নয় সে কতদূর এগিয়েছে, সেটাই আসল কথা।

মাত্র ১৬ বছর বয়সী জাহিন আসায়ী স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রচলিত শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে দেয়। কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি না হয়ে, জাহিন কোনো রিভিশন ম্যারাথনেও অংশ নেয়নি। গত পাঁচ বছর ধরে সে একাই পড়াশোনা করেছে কোনো শিক্ষক ছাড়াই, আর সেই সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই, যা অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়ে থাকে। তবুও, সে দশম শ্রেণির ফলাফল ঘোষণার সময় ভালো জায়গা করে সে উত্তীর্ণ হয়।তবে তার মার্কশিটে থাকা নম্বরগুলো তার জীবনের কাহিনির মাত্র একটি অংশ বলে দেয়।

যখন অনেক বন্ধুই স্যাম্পল পেপার সমাধানে ব্যস্ত ছিল, তখন জাহিন নিজেই একটি স্টার্টআপ তৈরি করছিল। কেউ যখন পাঠ্যপুস্তক পুনরাবৃত্তি করছিল, তখন সে লোগো ডিজাইন করছিল, কোডিং শিখছিল, জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলছিল এবং গিটারে সুর তুলছিল। তার লক্ষ্য কখনো র‍্যাঙ্ক অর্জন করা ছিল না। সে একটি জীবন গড়ে তুলেছে।
 
জাহিন বলে, “আমি কেবল পরীক্ষায় পাশ করতে চাইনি। আমি সত্যি সত্যি কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আমার নিজের কিছু করার ইচ্ছা ছিল।”

কাশ্মীরে শিক্ষাগত কৃতিত্ব প্রায়শই নম্বর এবং র‍্যাঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানে শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, টিউশন, কোচিং এবং পরীক্ষার গণ্ডিতেই আটকে আছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সফলতা শুধু নম্বরের খেলা যত বেশি নম্বর, তত বেশি প্রশংসা। তারপর কী হবে, সেটা কেউই জিজ্ঞাসা করে না।

 কয়েক বছর ধরে টপারদের সঙ্গে কাজ করে আসা শ্রীনগরের শিক্ষক সাদিক মহম্মদ বলেন,“এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এক আবেগে পরিণত  নম্বর পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা সবকিছু করে। আর একবার তারা নম্বর পেলে, ব্যবস্থাই তাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা খুব কমই তাদের অনুসরণ করি বা দেখি, তারা ভবিষ্যতে কী করছে?”
 

 
কাশ্মীরের সন্তান জাহিন
 
এর বিপরীতে, জাহিন নিজেকে একজন ব্যতিক্রমী ছাত্র হিসেবে প্রমাণ করেছে। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই সে নিজের প্রথম কনসালটেন্সি রেজিস্টার করে। গোঁফ ওঠার বা ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আগেই সে একজন সিইও হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে সে একটি ক্ষুদ্র উৎপাদন ইউনিট শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে, জাতীয় পর্যায়ে ফুটবলে সে জম্মু-কাশ্মীরকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সে একজন স্ব-শিক্ষিত গ্রাফিক ডিজাইনার, একজন প্রতিভাবান বক্সার, একজন অপেশাদার সঙ্গীতশিল্পী এবং একজন তরুণ কোডার যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো পাঠ্যক্রমের গণ্ডির অনেক বাইরে বিস্তৃত।তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে শুধু প্রতিভা নয়, বরং তার দৃষ্টিভঙ্গি ও দিশা।

যখন তার বয়সী অন্য শিশুদের শেখানো হচ্ছিল কেবল সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে, তখন জাহিন বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছিল।
 একটি ব্র্যান্ডের প্রয়োজনীয়তা কী? একটি প্রোডাক্ট কীভাবে বাস্তব জীবনের কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে? স্কুল যদি আমাকে কিছু না শেখায়, তাহলে আমি নিজের থেকে কী শিখতে পারি?

তার মা-বাবা স্বীকার করেন, শুরুতে তারা সন্দিহান ছিলেন। জাহিনের গর্বিত বাবা, প্রাক্তন ব্যাংকার ফারুক আসাই বলেন,"আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু আমরা দেখলাম, ও কতটা সিরিয়াস।" সে নিজের মতো করে শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। সে শিখেছে, ব্যর্থ হয়েছে, এবং ব্যর্থতা থেকেই নিজেকে উন্নত করেছে। তাই আমরা তাকে নিজের পথে এগোতে দিয়েছি।"

জাহিন শুধু শিক্ষিত হতে চায়নি সে মানুষের উপযোগী হতে চেয়েছে।ষ্টার্টআপ সংস্কৃতির উত্থান ঘটছে এমন একটি দেশে, জাহিন সেই নতুন প্রজন্মের অংশ, যারা সফলতার প্রচলিত পথে না হেঁটে অন্য রাস্তা বেছে নিতে চাইছে।

যেখানে অনেকের জন্য স্কুল ও কোচিং সেন্টার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে জাহিন বিশ্বাস করে যে শেখার অন্যান্য পদ্ধতির প্রতিও আমাদের মন খোলা রাখা উচিত।
 

 
সাধনায় বাস্ত্য জাহিন
 
সে বলে:“আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরোধী নই। কিন্তু সেগুলো সবার জন্য উপযুক্ত নয়। আমি মনে করি ছাত্রছাত্রীদের কিছু তৈরি করার সুযোগ দেওয়া উচিত, চেষ্টা করার সুযোগ দেওয়া উচিত, ব্যর্থ হওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত এবং তবুও তাদের সফল বলে বিবেচনা করা উচিত।”

প্রতি বছর নতুন টপারদের তালিকা শিরোনামে জায়গা করে নেয়।কিন্তু সেই গল্পগুলোর খুব কমই বলে, টপাররা আদৌ পরে কী করে।

অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় প্রধান ড. জামিল হাসান বলেন,“আমরা তাদের নম্বর নিয়ে গর্ব করি, তাদের ভবিষ্যৎ নয়। আমরা জিজ্ঞেস করি না, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে কি? তারা অন্যদের সাহায্য করেছে কি? তারা সুখী তো?”

জাহিনের গল্প সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দেয় নিঃশব্দে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে।তার সাফল্যে কোনো চমক নেই। এর সঙ্গে নেই কোনো ট্রফি বা জাঁকজমকপূর্ণ ভাষণ
 
কিন্তু এই সাফল্য গড়ে উঠেছে নমনীয়তা, আত্মনির্দেশ, এবং শুধুমাত্র পাশ করার চাইতেও বেশি কিছু করার ইচ্ছার ভিত্তিতে। আর হয়তো এটাই তাকে সবার থেকে আলাদা করে তোলে।
 
গুণগত সাংবাদিকতার জন্য বহু সময়, অর্থ ও কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন  এবং সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা সেই কাজটি করে চলেছি।আমাদের সাংবাদিক ও সম্পাদকরা কাশ্মীর এবং তার বাইরেও অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করছেন, যাতে আপনি যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেন, সেসব গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি তুলে আনা যায় এমন কাহিনি, যা জীবন বদলে দিতে পারে,এমন অন্যায়, যা উদ্ঘাটিত হওয়া দরকার।আমরা বিশ্বাস করি, সত্যকথা বলা দায়িত্ব এবং প্রয়োজন আর সেই দায়িত্ব পালনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
 
আজ আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ কাশ্মীর অবজার্ভার পড়ছেন ,অন্যদিকে বিজ্ঞাপন থেকে আয় দ্রুতগতিতে হ্রাস পাচ্ছে ।আর সেই তুলনায়,মাত্র হাতে গোনা কিছু মানুষই আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন।স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ ও গভীর সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে আপনাদের সহায়তা  আগের সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।