আর্সলা খান / নয়াদিল্লি
চমলিয়াল মেলা ২০২৫: ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রতি বছর ২২ জুন তারিখে আয়োজন করা হয় বাবা চমলিয়াল মেলা, যেখানে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ থেকেই মানুষ চাদর চড়াতে আসেন।
কীভাবে এই মেলা দুই দেশের মধ্যে একতার প্রতীক হয়ে উঠেছে? আসুন, জেনে নেওয়া যাক।ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেও প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বাবা চমলিয়ালের উরস (মেলা) আর এই উপলক্ষে ভক্তদের মধ্যে থাকে প্রবল উৎসাহ ও আনন্দ।
চমলিয়াল মেলায় ভক্তরা
আসলে, এবারে পাকিস্তানি ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বাবা দিলীপ সিং মানহাসের দরগাহর ‘শরবত’ ও ‘চিনি’র তাবাররুক (পবিত্র প্রসাদ)-এর জন্য। এই দরগাহ বাবা চমলিয়াল মেলা নামেও সুপরিচিত।
মেলা আন্তর্জাতিক সীমান্তের দূরত্ব কমিয়ে আনে ভারত ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্তে বসা এই মেলা দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
স্থানীয় মানুষের মতে, প্রতিবছর পাকিস্তানি ভক্তরা বিপুল সংখ্যায় চমলিয়াল বাবার দরগায় চাদর চড়াতে আসেন, যা এই অঞ্চল জুড়ে ধর্মীয় সহাবস্থান ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ২২ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই মেলার প্রস্তুতি মাসখানেক আগেই শুরু হয়ে যায়, এবং এবারও মেলার আয়োজন জোরকদমে চলছে।
সাম্বার ডেপুটি কমিশনার অভিষেক শর্মা
‘চিনি’ ও ‘শরবত’-এর তাবাররুক জম্মু থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে, সাম্বা জেলার রামগড় অঞ্চলের ডগ গ্রামে প্রতি বছর এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্থানটি দুই দেশের ইতিহাসকে একসাথে ধারণ করে আছে।
মেলার সময়, পাকিস্তানি ভক্তদের পক্ষ থেকে দরগায় চাদর চড়ানো হয়,আর তার বদলে, ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্ত পার করে ‘চিনি’ ও ‘শরবত’ পাঠানো হয়, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাবা দিলীপ সিং মানহাসের দরগায় মানুষদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
সম্প্রীতির মেল বন্ধন মেলাকে ঘিরে
দূরদূরান্ত থেকে আশা নিয়ে আসা এই ভক্তরা নিজের প্রার্থনা ও মনোবাসনা নিয়ে দরগায় উপস্থিত হন।স্থানীয়দের মতে, এই দরগায় আসলে অনেকের চর্মরোগ সেরে যায়। দরগার ইতিহাস সম্পর্কে স্থানীয়দের কথায়, বহু বছর আগে বাবা দিলীপ সিং মানহাসের এক শিষ্য ‘চম্বল’ নামের এক ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হন।তখন বাবা ওই শিষ্যকে দরগার কুয়োর জল ও মাটির মিশ্রণে তৈরি এক প্রলেপ শরীরে লাগাতে বলেন,এবং তা লাগানোর পরই রোগ সেরে যায়।এই ঘটনার পর থেকে, দরগার পানি ও মাটি অলৌকিক চিকিৎসার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।ঠিক তখন থেকেই বিশ্বাস জন্মে গেছে যে বাবা চমলিয়াল চর্মরোগ সারিয়ে তোলেন।
লোককথাতেও বাবা চমলিয়ালের নাম উল্লেখ আছে।সেখানে বলা হয়েছে, দিলীপ সিং মানহাসের বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর গলা কেটে হত্যা করে।এছাড়াও, জুন মাসে আয়োজিত বাৎসরিক মেলা ছাড়াও,সারা দেশ থেকে প্রতিদিনই মানুষ এই দরগায় আসেন চর্মরোগ সারাতে,কারণ তাদের অগাধ বিশ্বাস বাবা চমলিয়ালের আশীর্বাদে রোগ মুক্তি মেলে।
জেলার কমিশনার জানালেন ঐতিহ্যের গোপন কথা
দরগায় চাদর চড়ানোর পরম্পরা
সাম্বার ডেপুটি কমিশনার অভিষেক শর্মা জানিয়েছেন,চমলিয়াল মেলার শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল আয়োজনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।তিনি বলেন,বিএসএফ কর্মকর্তারাও ভক্তদের সুবিধার্থে ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।৩৩৫ বছর পুরনো এই ঐতিহ্য অনুযায়ী,বাবা চমলিয়াল পাকিস্তানের সিয়ালকোট জেলার সাইয়্যদিয়ানওয়ালা গ্রামে বসবাস করতেন।এই মেলা প্রতিবছর পাকিস্তানের সাইয়্যদিয়ানওয়ালা এবংভারতের চমলিয়াল গ্রামে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে লাখ লাখ ভক্ত অংশগ্রহণ করে। ২০০৩ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর,সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে এই দরগায় আসা শুরু করে।মেলার সময় পাকিস্তান থেকে ভারতীয় রামগড় সেক্টরের দরগায় চাদর চড়ানো হয়, আর ভারতের পক্ষ থেকে চিনি, মাটি ও শরবত পাঠানো হয়।
এভাবেই ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভক্তির ঐক্য গড়ে তোলে এই চমলিয়াল মেলা।