দেবকিশোর চক্রবর্তী
প্রায় চার বছর পর ফের চালু হতে চলেছে বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারের বড় স্বস্তি মিলল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেই শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে এবং সমস্ত বকেয়া অর্থ মঞ্জুর করে দিতে হবে কেন্দ্রকে। ফলে, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে নতুন করে প্রাণ ফিরতে চলেছে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে।
বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে একসময় উঠেছিল বেলাগাম দুর্নীতির অভিযোগ। কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল, মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ, দার্জিলিং-সহ একাধিক জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে সেই দুর্নীতির প্রমাণও হাতে পেয়েছিল কেন্দ্র। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে পরে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে বলেন, “কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে অনন্তকালের জন্য ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না।” তাঁর নির্দেশে রাজ্যে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার কথা জানানো হয়। সেই সঙ্গে আদালত স্পষ্ট করে দেয়, প্রয়োজনে কেন্দ্র সরাসরি উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবে এবং দুর্নীতির তদন্তও সমান্তরালভাবে চালিয়ে যেতে পারবে।
হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবারের শুনানিতে বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ কেন্দ্রের উদ্দেশে মন্তব্য করে, “আপনারা মামলা তুলে নেবেন? না কি আমরা খারিজ করব?”, এই মন্তব্যের পরেই আদালত কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল থাকে।
এই রায়ে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত রাজ্য প্রশাসন ও শাসকদল। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “এর আগে হাইকোর্ট থাপ্পড় মেরেছিল, এবার সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা খেল কেন্দ্র। এরপরও যদি টাকা না দেয়, তাহলে ওরা নিজেরাই নিজেদের বাংলা বিদ্বেষী বলে তকমা দেবে।”
রাজ্য সরকারের আশা, এবার ভোটের আগেই প্রকল্পটি নতুন করে গতি পাবে এবং বকেয়া অর্থ পাওয়ার পর গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠবে। প্রায় চার বছরের অপেক্ষার পর বাংলার লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ শ্রমিকের কাছে এই রায় নিঃসন্দেহে এক বড় স্বস্তির খবর।