প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অবরুদ্ধ উত্তরবঙ্গের পর্যটনে বড় ধাক্কা, রাতারাতি বুকিং বাতিল করছেন পর্যটকরা

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 20 d ago
উত্তরবঙ্গের পর্যটনে বড় ধাক্কা
উত্তরবঙ্গের পর্যটনে বড় ধাক্কা
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। গত সপ্তাহের টানা প্রবল বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও নদী ফুলে ওঠায় এই দুই জেলার বহু এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে শুধু স্থানীয় জনজীবনই নয়, উত্তরবঙ্গের অন্যতম আয়ভিত্তিক খাত—পর্যটন শিল্প—মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জলপাইগুড়ির গরুমারা, চাপরামারি ও বক্সা টাইগার রিজার্ভের মতো জনপ্রিয় অরণ্যভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। বহু জায়গায় বন বিভাগের কটেজ ও রিসর্টগুলি প্লাবিত হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত। নদী তিস্তা, তোর্সা ও জল্পেশের জলস্রোত বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন আগাম বুকিং বাতিল করেছে। পুজোর আগে এই সিদ্ধান্তে পর্যটন উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত পড়েছে।

আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁও, বক্সা, রাজাভাতখাওয়া, এবং চিলাপাতার মতো এলাকায় রাস্তা ভেসে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। ডুয়ার্স অঞ্চলের বহু হোমস্টে ও রিসর্টে পর্যটকরা আটকে পড়েছিলেন, যাদের পরে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই মৌসুমে তাঁদের আয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা।

পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “এই দুর্যোগের আগে থেকেই পুজো উপলক্ষে বুকিং প্রায় পূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন সমস্ত বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকায় পৌঁছেছে।” অন্যদিকে, পরিবেশবিদরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, নদীর তীরে অবৈধ হোটেল তৈরি এবং বনাঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াই এই দুর্যোগের অন্যতম কারণ।

তবে প্রশাসনের তরফে পুনর্গঠনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতু মেরামত, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, এবং ক্ষুদ্র পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের আশ্বস্ত করতে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পর্যটন ক্ষেত্রগুলি ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ডুয়ার্স অঞ্চলের অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভর করে পর্যটনের উপর। ফলে এই বিপর্যয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা ও আঞ্চলিক উন্নয়নের উপরও। এখন সকলেরই আশা—প্রকৃতি ও প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত এই বিপর্যয় কাটিয়ে আবারও পর্যটকের কোলাহলে মুখর হবে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।