কলকাতা
পাঁচ দীর্ঘ বছর পর আবারও আকাশে মিলল ভারত ও চীনের পথ। শুক্রবার রাতে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইন্ডিগো ফ্লাইট 6E1703 উড়ে গেল চীনের গুয়াংজৌর উদ্দেশ্যে, আর তার সঙ্গেই নতুন অধ্যায় খুলল দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে।
রাত ১০টা ০৭ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে, যা NSCBI বিমানবন্দরের পরিচালক নিজেই সামাজিক মাধ্যমে ভাগ করে নেন। এয়ারবাস A320 মডেলের এই বিমানটিতে ছিলেন মোট ১৭৬ জন যাত্রী। প্রায় ছয় ঘণ্টার যাত্রা শেষে এটি ভোর ৪টা ০৫ মিনিটে পৌঁছাবে গুয়াংজৌ বায়িউন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এই পদক্ষেপ বাণিজ্য, পর্যটন ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগকে আরও সহজতর করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে। ইন্ডিগো প্রতিদিন কলকাতা ও গুয়াংজৌর মধ্যে নন-স্টপ ফ্লাইট চালাবে। এছাড়া দিল্লি-গুয়াংজৌ রুটে ১০ নভেম্বর থেকে এবং দিল্লি-সাংহাই রুটে ৯ নভেম্বর থেকে অতিরিক্ত উড়ান শুরু হবে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যে বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই সরাসরি উড়ান পুনরায় চালু হওয়া দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চীনের উপ-কনসাল জেনারেল চিন ইয়ং (Qin Yong) এই দিনটিকে “ভারত-চীন সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আজ ভারত-চীন সম্পর্কের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। পাঁচ বছর পর এই সরাসরি ফ্লাইটের পুনরারম্ভ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বড় উন্নতি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এর প্রত্যাশা করছিলাম, এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”
ফ্লাইটের উদ্বোধন উপলক্ষে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বালন করে এই সাফল্য উদ্যাপন করা হয়, যেখানে যাত্রী, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং এয়ারলাইনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চিন ইয়ং আরও বলেন, এই উড়ান চালুর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার “প্রথম ফল” পাওয়া গেছে। তিনি যোগ করেন, “দুই দেশের নেতাদের বৈঠকে যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছিল, এই সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হওয়া তারই বাস্তব প্রতিফলন।”
চীনের উপ-কনসাল জেনারেল জোর দিয়ে বলেন, ভারত ও চীনের সম্পর্ক প্রতিযোগিতার নয়, বরং অংশীদারিত্বের। উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে ব্রিকস, এসসিও এবং গ্লোবাল সাউথের সদস্য দেশ হিসেবে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
বিমানবন্দর পরিচালক ড. পি. আর. বেউরিয়া, যিনি এদিন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (AAI) ও ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, ঘটনাটিকে “এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “এটি ভারত সরকারের এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করছি। এখন এটি নিয়মিত পরিষেবা হিসেবে চালু থাকবে এবং আপাতত কেবল ইন্ডিগোই এই রুটে উড়ান চালাচ্ছে।”
ড. বেউরিয়া আরও জানান, কলকাতা-গুয়াংজৌ সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায় ব্যবসা, পর্যটন ও সংযোগ বাড়বে এবং পূর্ব ভারতের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কলকাতার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।