বিপর্যস্ত পাহাড়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসীরা

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 18 d ago
বিপর্যস্ত পাহাড়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসীরা
বিপর্যস্ত পাহাড়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসীরা
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে অতি বৃষ্টির ফলে ভয়াবহ ভূমিধস ও বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং ও সংলগ্ন পাহাড়ি জনপদগুলোতে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এবং হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। এই কঠিন সময়ে যখন সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তখন মানবসেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। তাঁদের এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে সামান্য হলেও স্বস্তির হাসি।
 
দার্জিলিং জেলার কয়েকটি দুর্গম গ্রামে পৌঁছাতে যেখানে সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ, সেখানেও দেখা গেছে সংঘের সন্ন্যাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রম। তাঁরা পাহাড়ি খাদের ধারে ধারে হেঁটে, কখনও কাঁধে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে, কখনও ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছেছেন দুর্গত মানুষের কাছে। তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন চাল, ডাল, লবণ, তেল, শুকনো খাবার, পানীয় জল, কম্বল, ওষুধ এবং কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম।
 
ভারত সেবাশ্রম সংঘের মুখপাত্র স্বামী পূর্ণানন্দজী মহারাজ জানিয়েছেন, সংঘের দায়িত্ব কেবল ধর্মীয় কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মানবতার সেবাই তাঁদের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, “মানুষ যখন বিপদে পড়ে, তখন ধর্ম, জাতি, ভাষা বা প্রদেশের ভেদাভেদ থাকে না। তখন সবার আগে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের কর্তব্য।” সংঘের কলকাতা, শিলিগুড়ি, ও কোচবিহার শাখা থেকে সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা একত্রিত হয়ে এই ত্রাণ অভিযান শুরু করেছেন।
 
ত্রাণ কার্যক্রমের প্রথম পর্যায়ে প্রায় এক হাজার পরিবারকে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই, খাতা ও শিক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করেছেন, যেখানে স্থানীয় ডাক্তারদের সহায়তায় আহত ও অসুস্থ মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
 
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশও সংঘের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। কালিম্পং জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “যেখানে সরকারি কর্মীদের পৌঁছাতে সময় লেগেছে, সেখানে ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসীরা আগে পৌঁছে গেছেন। তাঁদের মানবিক উদ্যোগ আমাদেরও অনুপ্রাণিত করছে।”
 
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষরা জানান, তাঁরা এমন ত্রাণ পেয়ে যেন আবার নতুন করে বাঁচার আশা পাচ্ছেন। একজন দুর্গত গ্রামবাসী বলেন, “সব হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু এই সন্ন্যাসীরা এসে আমাদের হাতে খাবার আর আশ্বাস দিয়েছেন। মনে হচ্ছে, আমরা একা নই।”
 
সংঘের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই ত্রাণ কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদি হবে। তাঁরা ভবিষ্যতে পাহাড়ি এলাকায় পুনর্গঠনমূলক কাজেও অংশ নেবেন, যেমন ভাঙা ঘর পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত, ও শিশুদের শিক্ষার পুনর্বিন্যাস।
 
মানবতার এই অনন্য উদাহরণ আবার প্রমাণ করল, ভারত সেবাশ্রম সংঘ শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এক মানবকল্যাণের আন্দোলন। তাঁদের এই ত্যাগ, পরিশ্রম ও করুণাময় সেবার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেল ‘সেবা পরমো ধর্মঃ’-এর প্রকৃত অর্থ।
 
এই দুর্যোগের অন্ধকারে সংঘের সন্ন্যাসীরা যেন এক একটি আলোর শিখা, যারা নিঃস্ব মানুষের জীবনে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের এই উদ্যোগ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, মানবতার পাশে দাঁড়াতে, বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়াতে, এবং দেশ ও সমাজের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে।