মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে পাকা করতে বনগাঁ, ঠাকুরনগরে জোড়া কর্মসূচি জননেত্রী মমতার

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 24 d ago
মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে পাকা করতে বনগাঁ, ঠাকুরনগরে জোড়া কর্মসূচি জননেত্রী মমতার
মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে পাকা করতে বনগাঁ, ঠাকুরনগরে জোড়া কর্মসূচি জননেত্রী মমতার
 
দেব কিশোর চক্রবর্তী

বিহারের নির্বাচনী ফলাফলের পর সমগ্র পূর্বাঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর কৌশল খুঁজছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, এমন রাজনৈতিক জল্পনার মাঝেই বঙ্গ রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে নিশানা করে বড়সড় পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত মতুয়া সমাজের প্রতি সরাসরি বার্তা দিতে তিনি ঘোষণা করলেন বনগাঁয় জনসভা এবং ঠাকুরনগরে পদযাত্রা, জোড়া কর্মসূচির।
 
বিগত কয়েক বছর ধরে মতুয়া সমাজকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি প্রত্যক্ষ করেছে উত্তর ২৪ পরগনার এই অঞ্চল। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও এনআরসি নিয়ে মতুয়াদের বড় অংশের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি হওয়ার সুযোগে বিজেপি তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার বিভিন্ন সামাজিক ও আর্থিক প্রকল্পের মাধ্যমে মতুয়া জনমত নিজের দিকে রাখার চেষ্টা করেছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই নতুন তাৎপর্য বহন করছে।
 
মতুয়াদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ঠাকুরনগরকে ঘিরে সব সময়ই রাজনীতির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বরাবরের মতোই এখানে বড় সভা বা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা চালায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা সেই প্রয়াসে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁর সমর্থকেরা দাবি করছেন, রাজ্য সরকারের বহু প্রকল্প, যেমন স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষিবন্ধু, কন্যাশ্রী বা ছাত্র-যুব সমাজের জন্য ভর্তুকিযুক্ত পরিষেবা, মতুয়া সহ সাধারণ মানুষের জীবনে কার্যকর পরিবর্তন এনেছে। সেই উন্নয়নের বার্তাকেই আরও প্রবলভাবে পৌঁছে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
 
বনগাঁয় তাঁর নির্ধারিত জনসভাও তাই বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এই লোকসভা কেন্দ্র বহুদিন ধরেই মতুয়া ভোটের আধার হিসেবে চিহ্নিত। রাজনৈতিক অঙ্গন এখানে অত্যন্ত চঞ্চল। দু’দলেরই তীব্র প্রচার, সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা এবং বারংবার দল পরিবর্তনের রাজনীতির কারণে এলাকা সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। মমতার জনসভা যে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক আবহকে নতুনভাবে নাড়া দেবে, তা বলাই যায়।
 
এমন প্রেক্ষাপটে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সমান্তরালভাবে রাজ্যে সংগঠন মজবুত করতে একাধিক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। তাদের লক্ষ্য, আগামী নির্বাচনে বাংলার মাটিতে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করা। ফলে মতুয়া সমাজের সমর্থন কে পাবে, তা ভবিষ্যৎ সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। বিজেপির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করা হচ্ছে, সিএএ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা মতুয়া সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে। বিপরীতে তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবে মানুষের সমস্যা কমাবে না, বরং বাড়াবে। এই যুক্তি সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়া অঞ্চলে নিজের রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট করতে চাইছেন।
 
রাজনৈতিক ওই বার্তার কেন্দ্রে রয়েছে “উন্নয়ন” এবং “অধিকার”, যে দুই অঙ্গকে তিনি বরাবরই তৃণমূল সরকারের শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান মতুয়া সমাজের মধ্যে কোনও বিভাজন বা ভুল বোঝাবুঝির জায়গা না থাকে। রাজ্যের উন্নয়নমূলক উদ্যোগে তাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ুক, এই ইচ্ছা থেকেই এই জোড়া কর্মসূচি।
 
তবে রাজনীতিতে কোনও ঘটনাই এককভাবে ঘটে না। এই কর্মসূচিকে ঘিরে প্রশাসনিক নিরাপত্তা, সংগঠনিক প্রস্তুতি এবং দলের সর্বস্তরের কর্মীদের চাঞ্চল্য ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আগামী কয়েক মাসে মতুয়া অধ্যায়কে কেন্দ্র করে বঙ্গ রাজনীতিতে আরও উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। এর মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগাঁ জনসভা এবং ঠাকুরনগর পদযাত্রা নিঃসন্দেহে নতুন সমীকরণ গড়ে দেবে, যার প্রভাব পড়বে রাজ্যের বৃহত্তর নির্বাচনী কৌশলেও।