দেবকিশোর চক্রবর্তী, কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবায় খুব শীঘ্রই নতুন অধ্যায় যোগ হতে চলেছে। রাজ্যের এসএসকেএম হাসপাতালের অন্তর্গত শম্ভুনাথ পণ্ডিত অ্যানেক্সে গড়ে তোলা হচ্ছে পূর্ব ভারতের প্রথম বোন ব্যাংক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক অনুষ্ঠানে নতুন স্বাস্থ্য প্রকল্পের ঘোষণা করতে গিয়ে এই বোন ব্যাংকের কথা জানান।
অন্যদিকে, রাজ্য মেডিক্যাল সার্ভিসেস কর্পোরেশন (WBMSC) ইতিমধ্যেই সরঞ্জাম কেনার জন্য ই-টেন্ডার প্রকাশ করেছে। টেন্ডারে উল্লেখ আছে: “Procurement of various Medical Equipment for the establishment of a Bone Bank at Sambhunath Pandit Hospital, Annex-II of IPGME&R-SSKM Hospital, Kolkata” টেন্ডারটি প্রকাশিত হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর এবং এটি টেন্ডার খোলার তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বলে সূত্রে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে, ঘোষণা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে কলকাতার এসএসকেএমেই প্রথম সরকারি উদ্যোগে বোন ব্যাংক গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে কবে থেকে এটি চালু হবে, সেই নির্দিষ্ট দিন এখনও জানানো হয়নি। স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কাজ শুরু হবে এবং খুব শিগগিরই এটি রোগীদের জন্য চালু করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সুতরাং বলাই যায় যে, পশ্চিমবঙ্গের বুকেও এখন খুব দ্রুত চোট-আঘাত, ক্যান্সারে হাড় বাদ দেওয়ার ঘটনা, সংক্রমণ সহ আধুনিক অসংখ্য বড় সার্জারিতে এখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চলেছে বোন ব্যাংক। পিজি’র অ্যানেক্স হাসপাতাল শম্ভুনাথ পণ্ডিতের দোতলায় প্রায় ৬৫০ বর্গফুট জায়গায় শুরু হচ্ছে এই ‘ব্যাংক’। অর্থোপেডিক, সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, অঙ্কোসার্জারি, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা এখান থেকে হাড় নিয়ে রোগীদের প্রয়োজনে কাজ লাগাতে পারবেন। এর ফলে বড়সড় অস্ত্রোপচার ও পুনর্গঠন সার্জারির ক্ষেত্রে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের প্রন্থেসিস বা মেগাপ্রন্থেসিস খাতে সরকারের খরচও কমবে।
পিজি’র প্রস্তাবিত বোন ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রধান, অধ্যাপক ডাঃ মুকুল ভট্টাচার্য বলেন, ‘ক্যান্সার সার্জারি থেকে ট্রমা কেয়ার—সর্বত্র এখন বোন ব্যাংকের গুরুত্ব অপরিসীম। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে চালু করা যাবে। সেক্ষেত্রে সরকারিক্ষেত্রে পূর্ব ভারতে প্রথম ‘বোন ব্যাংক’-এর পরিষেবা পাবে মানুষ। চিকিৎসক মহল সূত্রে খবর, বর্তমানে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চেন্নাইয়ের একটি সরকারি হাসপাতাল সহ দেশের হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে স্বীকৃত বোন ব্যাংক রয়েছে। পূর্ব ভারতে এখনও এমন স্বীকৃত বোন ব্যাংক গড়ে ওঠেনি। তবে বাইপাস লাগোয়া একটি প্রাইভেট হাসপাতাল নিজস্ব বোন ব্যাংক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পিজি সূত্রের খবর, দু’ভাবে এখানে হাড় সংরক্ষণ করা সম্ভব। প্রথমত, রোগী বা তাঁর বাড়ির লোকের অনুমতি নিয়ে বড় অস্ত্রোপচারে (যেমন হিপ, নি, জয়েন্ট রিপ্লেসমেনন্টে) বাদ যাওয়া হাড়ের টুকরো বা গোটা হাড় রাখা হবে। ঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে হাড়গুলি ৬ বছর পর্যন্ত অবিকৃত রাখা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, বাড়ির লোকের অনুমতিক্রমে ক্যাডাভার বা মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির শরীর থেকে হাড় সংগ্রহ করা। তবে এক্ষেত্রে বাড়ির লোকজন সাধারণত অনুমতি দিতে চাইবেন না বলে আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, একবার বোন ব্যাংক চালু করতে পারলে হাসপাতালের লক্ষ্য থাকে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সরকারি অন্যান্য চিকিৎসাক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা পূরণ। তারপর যে কোনও প্রাইভেট হাসপাতালের রোগীর প্রয়োজনেও ‘বোন গ্রাফট’ দেওয়া হয়।