পুরনো গাড়িকে বিশ্বমানের বিলাসী গাড়িতে রূপান্তরের কারিগর মেকানিক নুরুল হক

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 5 d ago
পুরনো গাড়িকে বিশ্বমানের  বিলাসী গাড়িতে রূপান্তর
পুরনো গাড়িকে বিশ্বমানের বিলাসী গাড়িতে রূপান্তর
 
মুন্নি বেগম , গুয়াহাটিঃ

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম ২০১৫ সালে মাদুরাইয়ের এক অনুষ্ঠানে দেশের নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানান, ছোট স্বপ্ন দেখা একটা অপরাধ। জীবনে সফল হতে হলে বড় স্বপ্ন দেখা উচিত। করিমগঞ্জ জেলার এক সাধারণ মোটর মেকানিক, নুরুল হকও ছোটবেলা থেকেই বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন।

তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন ল্যাম্বোরগিনির মতো বিলাসবহুল স্পোর্টস কার চালাবেন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে সম্প্রতি তিনি একটি পুরনো মারুতি সুইফট গাড়ি নিজেই কাস্টমাইজ করে সেটাকে বিলাসবহুল ল্যাম্বোরগিনির মতো বানিয়ে ফেলেছেন। নিজের সঞ্চয়ের  টাকা খরচ করে ল্যাম্বোরগিনি বানানো নুরুল হকের স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। এখন তাঁর লক্ষ্য, আরেকটি বিলাসবহুল গাড়ি ফেরারি তৈরি করা।উল্লেখ্য,রূপান্তরের কারিগর নুরুল হক মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাক নিজের হাতে বানানো ল্যাম্বোরগিনি গাড়ি উপহার দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন।

'আওয়াজ দ্য ভয়েস'-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মোটর মেকানিক নুরুল হক বলেন,"আমি গত ১৮ বছর ধরে গাড়ি মেরামতের কাজ করছি। সম্ভবত এই কারণেই গাড়ির প্রতি আমার একটা আলাদা টান রয়েছে। আমি সবসময় ল্যাম্বোরগিনির মতো বিলাসবহুল স্পোর্টস কার চালানোর কথা ভাবতাম। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে সেটা যেন একটা স্বপ্নের মতোই। আমি যেহেতু একজন মোটর মেকানিক এবং 'এন মারুতি কার কেয়ার' নামে আমার নিজস্ব গ্যারেজ আছে, তাই প্রতিদিন চার চাকার গাড়ি মেরামতের কাজ করি।
 

 
 উপহারে পাওয়া ল্যাম্বোরগিনিতে মুখ্যমন্ত্রী  ডঃ  হিমন্ত  বিশ্ব শর্মা
 
একদিন হঠাৎ মাথায় একটা ভাবনা আসে নিজেই একটা ল্যাম্বোরগিনি বানানোর চেষ্টা করব। ২০২০ সালে যখন কোভিড মহামারীর কারণে গোটা বিশ্বের মতো অসমেও লকডাউন শুরু হয়, তখন আমি গ্যারেজে থাকা যন্ত্রাংশ দিয়ে ইতালিয়ান মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি 'ল্যাম্বোরগিনি' বানানোর কাজ শুরু করি। গাড়িটি সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৮ মাস সময় লেগেছিল এবং মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ৬ লাখ টাকা।"কোনো প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ ছাড়াই নুরুল হক নিজে তৈরি করেছেন দুটি বিলাসবহুল ল্যাম্বোরগিনি। প্রথমটি তিনি নিজে ব্যবহার করেছিলেন, আর দ্বিতীয়টি উপহার দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে।

নুরুল হক তাঁর দুইটি গাড়ি নির্মাণ সম্পর্কে জানান,"অসমে আমি প্রথম ল্যাম্বোরগিনি তৈরি করেছি। আমি একটি পুরনো সুইফট গাড়িকে ল্যাম্বোরগিনির মতো গাড়িতে রূপান্তর করি। ল্যাম্বোরগিনি বানাতে আমি কোনো বিশেষ বা বিলাসবহুল যন্ত্রাংশ ব্যবহার করিনি। পুরনো সুইফট গাড়িটিরই ইঞ্জিন, চ্যাসিস আর লাইট রেখে, নিজে ডিজাইন করে সেটাকে ল্যাম্বোরগিনির রূপ দিয়েছি। এটি ছিল অসমের  বুকে তৈরী প্রথম কাস্টমাইজ ল্যাম্বোরগিনি।

এরপর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে উপহার দেওয়ার জন্য আবার সেই একই গাড়িকে নতুন করে বানিয়ে ল্যাম্বোরগিনির SC2০ মডেল হিসেবে তৈরি করি। দ্বিতীয় গাড়িটি বানাতে আমার ৪ মাস সময় লেগেছিল এবং পুরো ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। আমি বানানো প্রথম ল্যাম্বোরগিনির রঙ ছিল হলুদ, আর দ্বিতীয়টার রঙ ছিল সাদা।" 
 

নুরুল হক রুপান্তরের বাদশা
 
অসম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় মোটর মেকানিক হিসেবে কাজ করার পর, নুরুল হক গাড়ি কাস্টমাইজ বা মোডিফাই করার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি যেকোনো ভারতীয় মডেলের গাড়িকে বিলাসবহুল গাড়ির আদলে রূপান্তর করতে পারেন। ভবিষ্যতে তিনি নিজেই একটি ফেরারির রেপ্লিকা তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন।

নুরুল হক বলেন,"আমি প্রথমে ডিমাপুরের একটি গ্যারেজে মোটর মেকানিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলাম। তখন ছোটখাটো মেরামতির কাজ করতাম। পরে আমি যোরহাটে নিজের গ্যারেজ চালু করি। তখনও একটু একটু করে গাড়ি মোডিফাই করার চেষ্টা করতাম। এখন আমি ইতালিয়ান মডেলের দুটি ল্যাম্বোরগিনি বানিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরেকটি গাড়িকে ফেরারিতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা আছে। সরকার যদি সহযোগিতা করে, তাহলে আমি আরও এমন প্রজেক্ট শুরু করতে পারব।"
 
উল্লেখযোগ্য, Ferrari S.p.A. হলো ইতালির একটি বিখ্যাত বিলাসবহুল স্পোর্টস কার প্রস্তুতকারী কোম্পানি। এটি ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪০ সালে প্রথম গাড়ি তৈরি করে। ১৯৪৭ সালে কোম্পানিটি প্রথম বিলাসবহুল ফেরারি গাড়ি বাজারে আনে।