শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরী:
বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সাহিত্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মানুষ প্রকৃতি ও ঈশ্বর।বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি পাঠকদের মন জয় করে নিয়েছেন। যিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। উপন্যাস রচনার পাশাপাশি তিনি রচনা করেছিলেন ছোটগল্প, যা তিনি ২০টি গল্পগ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়া রয়েছেভ্রমণ কাহিনি, দিনলিপি ইত্যাদি।
তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস গুলির মধ্যে রয়েছে পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়, ইছামতী, অশনি ও দেবযান। এরমধ্যে তাঁর বহুচর্চিত উপন্যাস হল "পথের পাঁচালী', যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুবই সাধারণ। জীবনের বেশিরভাগ সময় দারিদ্রতাই ছিল তার সঙ্গী। নানান সংগ্রামের মাঝে লেখা নিয়েই বেঁচে ছিলেন কথা সাহিত্যের অন্যতম এই পথিকৃৎ । আর্থিক স্বচ্ছলতা যেটুকু পেয়েছিলেন তা ঐ জীবনের শেষ দশটা বছর।
তাঁর লেখালেখির জীবন ছিল মাত্র আঠাশ বছর। কারণ ৫৬ বছর (১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ – ১ নভেম্বর ১৯৫০) পর্যন্তই ছিল তাঁর জীবন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি এত গল্প, কবিতা, উপন্যাস রচনা করে মানুষের মন জয় করেছিলেন।
সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য তিনি মরণোত্তর "রবীন্দ্র পুরস্কার' লাভ করেন।
তাকে সম্মান জানাতেপশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে "বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য"।
১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দের মাঘ সংখ্যা "প্রবাসী'তে "উপেক্ষিতা' গল্পের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিভূতিভূষণের প্রথম আর্বিভাব ঘটে। ১৯২৫ সালে তিনি "পথের পাচাঁলী' রচনা শুরু করেন। এই বই লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ সালে, এটি বিভূতিভূষণের প্রথম এবং বিখ্যাত রচনা। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ তাঁর এই লেখাটি পছন্দ করে "বিচিত্রা' পত্রিকায় প্রকাশ করে মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর "অপুর সংসার' এবং "অপরাজিত' রচনা করেন। সেগুলি "পথের পাচাঁলীর'ই পরবর্তী অংশ। উভয় উপন্যাসেই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটে। 'পথের পাচাঁলী' উপন্যাসটি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা এবং ইংরেজি ও ফরাসীসহ বিভিন্ন পাশ্চাত্য ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর বিশেষ গল্প গ্রন্হ হল- "মেঘমল্লার', "মৌরীফুল'। তাঁর লেখা " চাঁদের পাহাড়' একটি অনবদ্য এ্যডভেঞ্চার কাহিনী যার পটভূমি আফ্রিকা। ২০১৩ সালে বিখ্যাত চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জী 'চাঁদের পাহাড়'কে বাংলা চলচ্চিত্রে রূপান্তর করেন। এই চলচ্চিত্রটিও বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে।
তাঁর সাহিত্যকর্ম শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্ব সাহিত্যেও বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।