জয়পুরে বিনামূল্যে ইংরেজি শিক্ষা দিচ্ছেন আনিছ স্যার; ৩৫০০-র বেশি ছাত্রছাত্রীকে ইংরেজি ভাষার পাঠদ

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 13 h ago
শ্রেণীকক্ষে ছাত্র-ছাত্রির সঙ্গে আনিছ স্যার
শ্রেণীকক্ষে ছাত্র-ছাত্রির সঙ্গে আনিছ স্যার
 
মহম্মদ ফারহান ইজরায়েলি | জয়পুর

জয়পুরের একটি পুরনো দালানের ছোট একটি ঘর থেকে শুরু হওয়া এক ক্ষুদ্র উদ্যোগ আজ হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর জীবন বদলে দিয়েছে।  ৪১ বছর বয়সী মহম্মদ আনিছ খানের বাস্তবিক প্রেরনামুলক কাজ, যাকে শিক্ষার্থীরা ভালোবেসে “আনিস স্যার” বলে ডাকেন।
 
ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আনিছ স্যার ২০১৯ সালে জয়পুরে বিনামূল্যে স্পোকেন ইংলিশ (Spoken English) ক্লাস শুরু করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া তরুণ-তরুণীদের ইংরেজি ভাষা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলা।এই উদ্যোগের পাশাপাশি, ২০১৯ সালেই তিনি “Learn English” নামে একটি শিক্ষামূলক বইও লিখেন তিনি।
 
শ্রেণীকক্ষে আনিস স্যারের শিক্ষার্থী
 
আনিস স্যারের কথায়, “অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী শুধুমাত্র ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারণে ভালো চাকরি পায় না। তাই আমি এই ক্লাস শুরু করি। ইংরেজি কোচিং চালানো খুব ব্যয়বহুল নয়, একজন শিক্ষক ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াতে পারেন। তাই এটা বিনামূল্যে চালানো সম্ভব—শুধু দরকার সঠিক উদ্দেশ্য আর নিষ্ঠা।”
 
বর্তমানে তাঁদের জয়পুরে দুটি কেন্দ্র রয়েছে।একটি এম. ডি. রোডে নানাজির হাভেলিতে, আরেকটি জালুপুরার মুকুন্দগড় হাউসে। এই কেন্দ্রগুলোতে স্পোকেন ইংলিশ ও পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্টের চার মাসের কোর্স শেখার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় । প্রতিটি ব্যাচে ৪০ থেকে ৬০ জন ছাত্র ছাত্রী থাকেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০% মেয়ে। আনিস স্যারের মতে, মেয়েরা শেখার ব্যাপারে আরও বেশি উৎসাহী।
 
এখন পর্যন্ত এই দুই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৭০০ জন ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেছে। এদের অনেকে বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানি, স্বাস্থ্যখণ্ডে ও সরকারি পরিষেবায় কাজ করছেন।

তিনি বলেন, আগে যারা মাদ্রাসা বা মসজিদে পড়াশোনা করেছে, তারাও এখন ইংরেজি শিখে কর্মক্ষেত্রে অগ্রগতি করছে্ন।আনিস স্যারের মতে, আধুনিক সময়ে ইংরেজি শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় ৪০% শব্দই ইংরেজি ভাষার। তাঁর কোচিং সেন্টারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল ধর্মীয় পরিবেশকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।তিনি বলেন,"আমরা চাই শিশুরা ধর্ম ও জগতের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখুক। যখন একজন হাফিজ বা আলিম ইংরেজি শেখে, তখন সে সমাজের জন্য আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।"
 
একটি অনুষ্ঠানে আনিস স্যারের ভাষণ প্রদানের একটি দৃশ্য
 
শিক্ষার্থী আনিস স্যারের এই বিনামূল্য কোচিং থেকে উপকৃত হয়েছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত।জয়পুরের মহম্মদ আজম বলেন,"আমি এখন একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছি, আর এই যাত্রা শুরু হয়েছিল আনিস স্যারের ক্লাস থেকে।" আনিস স্যারের ক্লাস থেকে পেয়েছি আত্মবিশ্বাস, পূর্ণ হয়েছে অনেকের স্বপ্ন। জয়পুরের আনিস স্যারের ক্লাস কেবল ইংরেজি শেখার জায়গা নয় এটি বহু তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন পূরণের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোহাম্মদ উমর বলেন,“আমি রাজস্থানের পুলিশে নির্বাচিত হওয়ার আত্মবিশ্বাসটা আনিস স্যারের ক্লাস থেকেই পেয়েছিলাম।”
 
ফারাহ নাজ বলেন,“জয়পুর রয়্যাল ফ্যামিলির ‘দ্য প্যালেস স্কুল’-এ শিক্ষকতা করার আমার স্বপ্নটি আনিস স্যারের ক্লাসের মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে।”

নতুন পরিকল্পনা ও সম্প্রসারণ


আনিস স্যার এখন জয়পুরের শাস্ত্রী নগর ও কারবালা এলাকায় নতুন কোচিং সেন্টার খোলার পরিকল্পনা করছেন। পাশাপাশি তিনি RAS, IAS-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য আলাদা কোচিংও শুরু করার ভাবনা নিয়েছেন।
 
তাঁর এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় এবং সমাজকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য থাকে, তবে এক ব্যক্তিও বিপ্লব শুরু করতে পারে। ২০০৬ সালে তাঁর নিজস্ব ইংরেজি শেখা দিয়ে পথচলা শুরু হয়। সেই সময়ে গুরু ইমরান খান স্যারের কাছ থেকে তিনি প্রেরণা পান।
 
আনিস স্যারের শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান করার একটি দৃশ্য

আনিস স্যারের কথায়:“তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল শুধু নিজের ইংরেজি উন্নত করা। কিন্তু আজ এটি আমার জীবনের মিশনে পরিণত হয়েছে।”
 

ভর্তি প্রক্রিয়া কীভাবে?

 
যারা পাঠ্যক্রমে অংশ নিতে চান, তাঁদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ আধার কার্ড, একটি ছবি,   রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ মাত্র  ৩০০ টাকা, এই সামান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেকোনো শিক্ষার্থী ইংরেজি শেখার যাত্রা শুরু করতে পারে।
 
একটি ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে, একটি বড় পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। আজ জয়পুরে আনিস স্যারের বিনামূল্যে ইংরেজি ক্লাসসমূহ একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর কাজ প্রমাণ করে, একজন ব্যক্তির একটি ছোট পদক্ষেপও সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।