আওয়াজ দ্য ভয়েস , ভুবনেশ্বরঃ
ওড়িশার কটক শহরের আইটি পেশাদার স্বাতী দাস শুধুমাত্র প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ বিশেষজ্ঞই নন, বরং অন্যের দুঃখকে নিজের বলে মনে করা এক সংবেদনশীল ব্যক্তি। গত তিন বছর ধরে, স্বাতী সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের মানসিক ও আবেগিকভাবে সহায়তা করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
সাইবার প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা যাতে মানসিক স্বস্তি পেতে পারেন,সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি ভুবনেশ্বর-কটক পুলিশ কমিশনারের সহযোগিতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ।
স্বাতী বলেন, "সাইবার অপরাধের ফলে শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতি হয় না, বরং মানুষের আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব পড়ে। অনেক ভুক্তভোগী উদ্বেগ, হতাশা এবং পিটিএসডি (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) এর মতো লক্ষণের সম্মুখীন হন। কেউ কেউ এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভাবতে শুরু করেন।"
ওড়িশার আইটি পেশাদার স্বাতী দাস
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মতে, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় তিনি এখন পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার সচেতনতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কর্মশালা পরিচালনা করেছেন ।
এখন প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী,তিনি এখন পর্যন্ত ১০০০-এরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এবং অংশগ্রহণকারীকে ডিজিটাল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘কপিং মেকানিজম’ শিখিয়েছেন। দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মতে, তিনি পুলিশের সহযোগিতায় ৫০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বিদ্যালয়,মহাবিদ্যালয়, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার সচেতনতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। এখন পর্যন্ত, তিনি ১০০০-এরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এবং অংশগ্রহণকারীকে ডিজিটাল আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘কপিং মেকানিজম’ শিখিয়েছেন ।
জেলা পুলিশের একমাত্র মহিলা স্বেচ্ছাসেবক স্বাতী তিন বছর ধরে একটানা সাইবার অপরাধ সচেতনতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি যে আইটি কোম্পানিতে কাজ করেন, সেটি তাকে ‘সাপোর্টিং মেন্টাল হেলথ’ উদ্যোগের অধীনে মানসিক পরামর্শদানের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রাজধানী ভুবনেশ্বরের সাইবার ক্রাইম ও ইকোনমিক অফেন্স থানাতেও তিনি ভুক্তভোগীদের পরামর্শ দেন।
স্বাতী বলেন, "অনেক ভুক্তভোগী এই বিশাল আর্থিক ক্ষতির কারণে এতটাই আঘাত পান যে তারা সামাজিক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অনেক সময় মানুষের সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ প্রতারকদের হাতে হারিয়ে যায়। এই যন্ত্রণা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন।"তিনি আরও বলেন, "অনেক সময় ভুক্তভোগীরা তাদের গল্প বলতে দ্বিধাবোধ করেন, কারণ তারা হানি ট্র্যাপ বা ডিপফেকের মতো প্রতারণার শিকার হন।"
সামাজিক মিডিয়ার কুপ্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন
স্বাতী বলেন, "সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের স্বস্তি দেওয়া, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের জানানো যে তারা একা নন। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক সহায়তা, মানসিক চাপ নিরসনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ সহায়ক হতে পারে।
স্বাতীর মতে, কোভিড-১৯ মহামারির পর সামাজিক মিডিয়ার আসক্তি মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, "সামাজিক মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা ব্যবহারকারীরা ক্রমাগত মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সহিংসতা বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু তাদের সম্পর্ক, আত্মবিশ্বাস এবং জীবনের মানদণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।"
স্বাতীর মতে,বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সামাজিক মিডিয়ার কুপ্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। স্বাতী দাসের মতো প্রযুক্তিবিদ এবং সংবেদনশীল মহিলা শুধুমাত্র ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন নন,বরং এই যুগে মানবতা ও সহমর্মিতার নতুন সংজ্ঞাও তৈরি করছেন। ওড়িশার কটকের এই সাইবার যোদ্ধা আজ অপরাধীদের কৌশলের শিকার হয়ে একসময় ভেঙে পড়া হাজার হাজার ভুক্তভোগীর জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছেন। প্রযুক্তি এবং অপরাধ উভয়ই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে স্বাতীর মতো মানুষের প্রচেষ্টা সমাজকে উন্নত, নিরাপদ এবং সংবেদনশীল করে তুলতে অনুপ্রেরণাদায়ক ভূমিকা পালন করছে