সতানন্দ ভট্টাচার্য,হাইলাকান্দিঃ
আসামের একজন অশিক্ষিত রিকশাচালক আহমদ আলী, যিনি নিজের গ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় একাধিক স্কুল গড়ে তুলেছেন, তিনি দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে সকলের নজর কেড়েছেন। সমাজের প্রতি তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।রিকশা চালিয়ে রোজগার করা অর্থ থেকে আহমদ আলী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যাতে শিশুরা স্কুলে যেতে উৎসাহ পায়।এর আগেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মাসিক রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’-এ দক্ষিণ আসামের শ্রীভূমি জেলার এক গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা আহমদ আলীর কথা উল্লেখ করেছিলেন।
রিকশা চালিয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবার চালানোর পাশাপাশি দক্ষিণ আসামে নয়টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন আহমদ আলী। তিনি নিজে দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি, তবে তিনি চেয়েছেন যেন তাঁর সমাজের কেউ অশিক্ষিত না থাকে।
আকাশবাণীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুকেশ কুমার আহমদ আলীকে দিল্লিতে ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে গেস্ট অফ অনার হিসেবে আমন্ত্রণ জানান। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে গর্বিত বোধ করছেন বলে জানান আহমদ আলী।
'আওয়াজ-দ্য ভয়েস'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহমদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখে নিজের নাম শুনে তিনি খুব উৎসাহ পেয়েছেন এবং কাজ করার শক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, নারীদের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এখনও অনেক কাজ বাকি।
৮৮ বছর বয়সি এই রিকশাচালক করিমগঞ্জ জেলার পাঠারকান্দি সার্কেলের খিলারবন্দ-মধুরবন্দ এলাকার বাসিন্দা। তিনি নিজের ৩২ বিঘা পৈতৃক জমি স্কুল গড়তে দান করেছেন। রিকশা চালিয়ে অর্জিত সমস্ত সঞ্চয় স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনে ব্যয় করেছেন।
বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত নয়টি স্কুলে ৫০০-র বেশি মেয়ে ও প্রায় ১০০ ছেলে পড়াশোনা করছে।
১৯৭৮ সালে তিনি প্রথম স্কুল গড়েন, পৈতৃক জমির একটি অংশ বিক্রি করে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলতে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে ছোট ছোট অনুদান নিয়েছিলেন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খিলারবন্দ-মধুরবন্দ ও আশপাশের এলাকায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত নয়টি স্কুলের মধ্যে তিনটি নিম্ন প্রাথমিক, পাঁচটি মধ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এই স্কুলগুলির মধ্যে পাঁচটি প্রাদেশীকরণ হয়েছে এবং বাকি স্কুলে শিক্ষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান করছেন।
৮৮ বছর বয়সেও আহমদ আলী নিজের গ্রামে একটি জুনিয়র কলেজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, যাতে গ্রামের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিকের পর কলেজে পড়তে পারে।
তিনি আওয়াজ-দ্য ভয়েস-কে বলেন, “আল্লাহর দয়া ও দিকনির্দেশনায় আমি নতুন প্রজন্মের জীবন পরিবর্তনের এক মিশনে আছি। নিজের সন্তান ও গ্রামের সন্তানদের পড়াতে পেরে আমি খুশি। এই সন্তুষ্টিই বড় প্রাপ্তি, কারণ এখন অনেক ছাত্র জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
আহমদ আলীর দুই স্ত্রী ও ১১টি সন্তান রয়েছে। তিনি কখনও নিজের নামে স্কুলের নাম রাখতে চাননি। কিন্তু গ্রামবাসীদের অনুরোধে স্কুলের নাম পরিবর্তন করে "আহমদ আলী হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল" রাখা হয়।
তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন, তবে তিনি চান সবাই তাঁকে "রিকশাচালক" বলুক। তাঁর মতে, সব কাজেরই সম্মান আছে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আহমদ আলীর কথা উল্লেখ করেছিলেন।
“প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে রেডিওতে নিজের নাম শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,” বলেন আহমদ আলী।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আহমদ আলীর এই মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এই রিকশাচালকের সমাজসেবাকে সম্মান জানানো উচিত।
এই নিঃস্বার্থ মিশনের কথা প্রথম জনসমক্ষে আনেন পাঠারকান্দির বিধায়ক তথা বর্তমানের মন্ত্রী কৃষেন্দু পাল । তিনি আহমদ আলীকে “একজন বিরল ব্যক্তিত্ব” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন মাল্টি-সেক্টোরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ফান্ড থেকে আহমদ আলী হাই স্কুলের উন্নয়নের জন্য ১১ লক্ষ টাকা অনুদান দেন।