ঐতিহ্যের উঠোনে আইনি টানাপোড়েন: বেলুড়ের রাসবাড়ি ঘিরে নতুন বিতর্ক

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 19 d ago
বেলুড়ের এই রাস বাড়িকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে আইনি টানাপোড়েন
বেলুড়ের এই রাস বাড়িকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে আইনি টানাপোড়েন
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

গঙ্গাতীরে দাঁড়িয়ে যেন ইতিহাসের সাক্ষী—বেলুড়ের সেই বিখ্যাত রাসবাড়ি। সময়ের ধুলোয় মলিন হলেও তার সৌন্দর্য আজও মোহিত করে পথচারীকে। কিন্তু এবার এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়—আদালতের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে মালিকানা ও ব্যবহার নিয়ে টানাপোড়েন।

১৮৯০ সালে জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের পুত্র পূর্ণচন্দ্র দাঁ ও সহধর্মিণী কাদম্বিনী দাসীর হাতে গড়া এই রাসবাড়ি একসময় ছিল জমজমাট ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ৪০ ফুট উঁচু নবরত্ন মন্দির, নাটমন্দির, নহবতখানা, ছ’টি শিবমন্দির আর বিশাল বাগানজুড়ে ছড়ানো সেই স্থাপত্য আজও কথা বলে প্রাচুর্য ও সংস্কৃতির। একদা এখানে শ্রীরামকৃষ্ণের তিথিপুজো উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরাও এসেছিলেন, বসেছিল রাসের মেলা—সেই থেকেই নাম ‘রাসবাড়ি’।

কিন্তু সেই ঐতিহ্য আজ বিপন্ন। অভিযোগ, প্রতিবছর ছটপুজোর সময় রাসবাড়ির নিজস্ব ঘাট ও প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়াই আয়োজন হয় ছট উৎসবের। ভিড় জমে হাজার হাজার মানুষের। গেট টপকে, পাঁচিল ভেঙে প্রবেশ করে বহু লোক, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দির ও বাগান। দেবোত্তর ট্রাস্টের আইনজীবী ও আদালত নিযুক্ত রিসিভার দ্বিজদাস চক্রবর্তী জানান, “রাসবাড়ি ব্যক্তিগত দেবোত্তর সম্পত্তি। তা সত্ত্বেও স্থানীয় ছট কমিটি একে ‘পাবলিক ট্রাস্ট’ বলে দাবি করে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।”

২০২২ সালেও একই অভিযোগে মামলা হয়েছিল, কিন্তু তাতে সেবাইত বা দাঁ পরিবারের কেউ পক্ষভুক্ত ছিলেন না। তাই তাঁদের বক্তব্য আদালতে পৌঁছায়নি। এবার, ছট উৎসবের আগেই ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে শিবকৃষ্ণ দেবোত্তর স্টেট, যাতে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে।

রাসবাড়ি নিয়ে দাঁ পরিবারের আরও ক্ষোভ—বালি পুরসভা রাসের মেলার জন্য একসময় কর দাবি করেছিল। ট্রাস্টের সীমিত অর্থে তা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মেলা বন্ধ হয়ে যায়। আরও অভিযোগ, গঙ্গায় নিকাশি ফেলার জন্য পুরসভা রাসবাড়ির ভেতর দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটায়, যার ফলে শিবমন্দিরের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বারবার জানানো সত্ত্বেও পুরসভার কোনও উদ্যোগ নেই।

একদিকে সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ধর্মের উত্তরাধিকার—অন্যদিকে আইনি জটিলতা, প্রশাসনিক উদাসীনতা ও সামাজিক চাপ। গঙ্গার ধারে বেলুড়ের সেই প্রাচীন রাসবাড়ি আজ যেন নীরবে প্রশ্ন তোলে—ঐতিহ্যের ঠিকানা কি কাগজে-কলমে ‘প্রপার্টি’ হয়ে যাচ্ছে?

আসন্ন ছটপুজোর আগে এখন সকলের নজর হাই কোর্টের রায় ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের দিকে। ঐতিহ্যের উঠোনে এই সংঘাতের সমাধান কবে হবে, তা নিয়েই আগ্রহী বেলুড়বাসী।