কিরীটেশ্বরী মন্দিরে কালীপুজো: ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভক্তির বার্তা ছড়াতে মুখর শক্তিপীঠ

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 12 d ago
কিরীটেশ্বরী মন্দিরে কালীপুজো
কিরীটেশ্বরী মন্দিরে কালীপুজো
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী

মুর্শিদাবাদের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শক্তিপীঠ কিরীটেশ্বরী মন্দিরে আসন্ন কালীপুজো (২০ অক্টোবর) উপলক্ষে এখন উৎসবের তোড়জোড়ে মুখর গোটা এলাকা। প্রতি বছরের মতো এবছরও মা কিরীটেশ্বরীর পুজো উপলক্ষে ভক্তদের ঢল নামার আশা করা হচ্ছে। গ্রামের অলিগলিতে বাজছে ঢাকের শব্দ, চলছে আলোকসজ্জা আর দেবীমূর্তি সাজানোর প্রস্তুতি।
 
এই দেবীস্থানটি ভারতের ৫১টি সতীপীঠের অন্যতম বলে পূজিত হলেও এটি এক ‘উপপীঠ’, অর্থাৎ এখানে দেবীর কোনো দেহাবশেষ নেই। পুরাণ অনুসারে, সতীর মুকুটখানি এখানে পতিত হয়েছিল বলেই স্থানটির নাম ‘কিরীটেশ্বরী’। তবুও ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীশক্তির উপস্থিতি এখানে অনুভবযোগ্য, আর সেই শক্তিই তাঁদের জীবনে আনেন শান্তি ও আশীর্বাদ।
 
মা কালী এখানে পূজিত হন দক্ষিণাকালী রূপে, যা ভক্তদের কাছে ন্যায়, শক্তি ও রক্ষার প্রতীক। মন্দিরের পুরোহিতদের মতে, “এখানে মায়ের রূপ একাধারে ভয়ংকর আবার মমতাময়ীও। তিনি অন্ধকার দূর করে আলো আনেন, অন্তরে ও সমাজে।”
 
পুজোর প্রস্তুতিতে ভক্ত ও গ্রামবাসীর ঐক্য
 
পুজো উপলক্ষে মন্দির চত্বরে চলছে রঙিন আলোকসজ্জা, চণ্ডীপাঠ, কীর্তনের মহড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। স্থানীয় মহিলারা ভোগ রান্নায় ব্যস্ত, যুবকেরা মন্দির প্রাঙ্গণ সাজাচ্ছেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।
 
পুজো কমিটির  এক সক্রিয় সদস্য বলেন, “মা কিরীটেশ্বরী কেবল শক্তির প্রতীক নন, তিনি ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করেন। আমাদের উদ্দেশ্য, এই পূজো মানুষকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একত্র করুক।”
 
দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী আবাসন ও ভোগ বিতরণের বিশেষ ব্যবস্থা। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। গ্রামের মানুষদের এক কথায়, “এই সময়টাতেই কিরীটেশ্বরী যেন নতুন করে জেগে ওঠে।”
 
প্রশাসনের নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
 
প্রতিবছর কয়েক হাজার ভক্তের আগমন হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা থাকবেন টহলে; স্থাপন করা হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে থাকবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও জল সরবরাহ কেন্দ্র। ভিড় নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় ক্লাবগুলিও সহযোগিতা করছে।
 
উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, মন্দির কমিটি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় সভা চলছে। এক আধিকারিক জানান, “ভক্তদের নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। আলোর উৎসবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটুক, তা আমরা চাই না।”
 
সমন্বয় ও ভক্তির প্রতীক মা কিরীটেশ্বরী
 
ভক্তদের মতে, মা কিরীটেশ্বরীর আরাধনা কেবল এক ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি মানবিক সংহতির প্রতীক। প্রতিবছর হিন্দু ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষও পুজোর আয়োজনে অংশ নেন, যা এই শক্তিপীঠের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
 
স্থানীয় শিক্ষক তাপস মণ্ডল বলেন, “মায়ের পুজো আমাদের শেখায় সহমর্মিতা। আজকের সমাজে সেই বার্তা আরও জরুরি।” ২০ অক্টোবরের রাতে মন্দির প্রাঙ্গণে হবে সারারাতব্যাপী আরতি, কীর্তন, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সর্বজনীন ভোগ বিতরণ। পুজো উপলক্ষে কিরীটেশ্বরী গ্রাম এখন সত্যিই উৎসবের রঙে রঙিন, ভক্তি, ঐক্য ও আলোয় আলোকিত এক মায়াময় শক্তিক্ষেত্র।