সুদীপ শর্মা চৌধুরী / গুয়াহাটি
আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাবেক মার্কিন সিআইএ কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, “পাকিস্তান তার পারমাণবিক বোমা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছিল, আর এই গোপন চুক্তির নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মুশারফ।”
জন কিরিয়াকু প্রায় ১৫ বছর সিআইএ-তে কর্মরত ছিলেন এবং পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জানান, ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে গোপন এক চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে ইসলামাবাদ তার পারমাণবিক প্রকল্পের মূল অংশ মার্কিন প্রশাসনের হাতে হস্তান্তর করে। তার ভাষায়, “জেনারেল মুশাররফ নিজে এই লেনদেনের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও রাজনৈতিক চাপে পাকিস্তান তার পারমাণবিক শক্তির মূল প্রযুক্তি বিক্রি করে দেয়।”
সূত্রমতে, ৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছায়। সেই সুযোগেই পারমাণবিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের ঘটনাটি ঘটে বলে কিরিয়াকুর অভিযোগ।
তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এই গোপন লেনদেনের বিষয়ে অবগত ছিলেন, কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে বিষয়টি চুপচাপ চাপা রাখা হয়। এই প্রতিবেদনের প্রকাশের পরও পাকিস্তান সরকার বা সেনাবাহিনীর তরফে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে ইসলামাবাদের কিছু কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, কিরিয়াকুর দাবি “ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত।”
বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে এই প্রকাশ্যে আসা বক্তব্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন:
* যদি কিরিয়াকুর দাবি সত্য হয়, তবে এটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গোপন পারমাণবিক বাণিজ্য।
* দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক ভারসাম্য নতুন করে পুনর্মূল্যায়নের মুখে পড়বে।
* পাকিস্তানের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোয় এই ঘটনার তাৎপর্য গভীর। জন কিরিয়াকুর এই দাবি এখনো প্রমাণিত নয়, তবে তার অবস্থান ও অভিজ্ঞতার কারণে তা হালকাভাবে নেওয়া সম্ভব নয়। যদি তার বক্তব্য সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি হবে এমন এক গোপন চুক্তি, যা শুধু পাকিস্তানের নয়, গোটা বিশ্বের পারমাণবিক রাজনীতিকে নাড়া দেবে।
সংবাহ পত্রের মন্তব্য এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাকিস্তানের সার্বভৌম নীতি ও প্রতিরক্ষা বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এখন অপেক্ষা করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার জন্য।