শারীরিক অক্ষমতা এক শক্তি: বিশ্ব বধির ক্রিকেট লিগের তারকা হিলাল আহমেদ ওয়ানি

Story by  Sudip sharma chowdhury | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 13 d ago
ক্রিকেট তারকা হিলাল আহমেদ ওয়ানি
ক্রিকেট তারকা হিলাল আহমেদ ওয়ানি

আওয়াজ – দ্য ভয়েস ব্যুরো

 

কাশ্মীরের অনন্তনাগের অরিগোহলে বসবাসকারী হিলাল আহমেদ ওয়ানি একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়। তিনি শ্রবণ ও বাকশক্তিহীন অর্থাৎ শুনতে বা বলতে পারেন না। তবে তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। খেলার সময় তিনি পুরোপুরি নিজের খেলায় মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর পারফরম্যান্স দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করে তোলেন।

হিলাল আহমেদ ওয়ানির গল্প এক গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি একজন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার, যিনি বিশ্ব বধির ক্রিকেট লিগে ভারতের হয়ে জয়ের পথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর জীবনকাহিনী প্রমাণ করে যে দৃঢ় সংকল্প ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে।

দুবাইয়ের জয়: যেখানে হিলাল ওয়ানির নীরবতাই গর্জে উঠেছিল


দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বধির ক্রিকেট লিগে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন হিলাল আহমেদ ওয়ানি। তিনি একজন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার, যিনি তাঁর ব্যাটিং দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করে তুলেছিলেন। সেই ম্যাচে তাঁর ব্যাট যেন গর্জে উঠেছিল তিনি জয় করেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং ম্যান অব দ্য সিরিজ দু’টি খেতাবই।

শেষ ম্যাচে তিনি মাত্র ২৯ বলে ৭০ রান করে দর্শকদের মন জয় করে নেন। তাঁর নীরবতা যেন খেলোয়াড়সুলভ সাহস আর প্রতিভার  ঝলক তুলে ধরেছিল।
 

ক্রিকেট তারকা হিলাল আহমেদ ওয়ানি
 
হিলাল আহমেদ ওয়ানি একজন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার। কেবল ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিংয়েও তিনি অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে তিনি তাঁর দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।

তাঁর খেলা প্রমাণ করেছে যে দৃঢ়তা, পরিশ্রম এবং প্রতিভা থাকলে যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। তিনি তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন। হিলাল আহমেদ ওয়ানির ব্যাটিং স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের রোমাঞ্চিত করে তুলেছিল। প্রতিটি বাউন্ডারি মারার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অনুরাগীদের আশা ও উদ্দীপনাও বেড়ে উঠছিল।

তাঁর সাফল্য দেখিয়ে দিয়েছে যে যদি দৃঢ় সংকল্প, নিষ্ঠা এবং নিজের প্রতিভার ওপর বিশ্বাস থাকে, তাহলে যেকোনো বড় লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। তিনি আজকের তরুণ-তরুণীদের জন্য এক অনন্য আদর্শ। নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম এই দুটোই হলো সাফল্যের চাবিকাঠি।


 পরিবারের সমর্থন:


হিলাল আহমেদ ওয়ানির স্বপ্ন পূরণে তাঁর পরিবারের ছিল অপরিসীম অবদান। তাঁর বড় বোন নীলম জান জানিয়েছেন, হিলাল ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আকৃষ্ট ছিল এবং সবসময় ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে খেলতে চাইত। পরিবার তার এই আবেগ ও আগ্রহকে বুঝতে পেরেছিল এবং সম্পূর্ণভাবে তাকে সমর্থন করেছিল। সেই ভালোবাসা ও সহায়তার ফলেই আজ হিলাল একজন সফল ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত।
 
২০১৪ সালে রঞ্জি নির্বাচনী পরীক্ষায় হিলাল আহমেদ ওয়ানি বড় ধরনের হতাশার মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর পরিবার কখনোই তাঁকে ভেঙে পড়তে দেয়নি। পরিবারের সহযোগিতা ও মানসিক সমর্থন তাঁকে আবেগিক শক্তি জুগিয়েছিল এবং তাঁকে বধির ক্রিকেট সার্কিটে প্রবেশের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। এই নতুন দিশা তাঁর জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং সেই পথে তিনি সাফল্য অর্জন করেন।
 

ক্রিকেট তারকা হিলাল আহমেদ ওয়ানি
 
হিলাল আহমেদ ওয়ানির আন্তর্জাতিক সাফল্যের পেছনে তাঁর পরিবারের ভালবাসা ও সমর্থন ছিল এক অন্যতম চালিকা শক্তি। মা-বাবার উৎসাহ ও সহযোগিতায় তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন। এই গল্প থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে পরিবারের ভালবাসা ও সমর্থন থাকলে জীবনের যেকোনো প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব।

শৈশবে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে হিলাল আহমেদ ওয়ানি তাঁর শ্রবণক্ষমতা এবং বাকশক্তি হারিয়েছিলেন। কিন্তু এই বড় ধাক্কার পরেও তাঁর ক্রিকেটের এর প্রতি ভালোবাসা এবং দৃঢ়তা এতটুকুও টলেনি।তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও গভীর আবেগই তাঁকে শারীরিক সীমাবদ্ধতাগুলো পেরিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

 

 শারীরিক সীমাবদ্ধতা ও বিজয়ী হওয়া:

 

হিলাল আহমেদ ওয়ানির স্কুলজীবন ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও গঠনমূলক। তিনি সাধারণ শিশুদের সঙ্গে একই শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করতেন এবং শিক্ষা ও খেলাধুলা উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। অমৃতসরে অবস্থিত অমনদীপ একাডেমিতে তিনি বহু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন এবং প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই "ম্যান অব দ্য ম্যাচ" বা "ম্যান অব দ্য সিরিজ" খেতাব জয় করেছেন।

হিলাল আহমেদ ওয়ানির কাহিনী তরুণ-তরুণীদের জন্য এক প্রেরণার নাম। তিনি বধির ক্রিকেট দলে যোগ দিয়ে বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করেছেন এবং নিজের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে এক সুপরিচিত নাম হয়ে পড়েছেন। তাঁর জীবন দেখায় যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই মানুষকে সীমাবদ্ধ করতে পারে না। অদম্য সাহস আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে যেকোনো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।