শতানন্দ ভট্টাচার্য , হাইলাকান্দিঃ
তেমন লেখাপড়া না করলেও, অনেক কিছুই পারেন তিনি। অভিনয় হোক বা রাজনৈতিক প্রচার, মঞ্চে অনুষ্ঠান পরিচালনা হোক বা অতিথি আপ্যায়ন সবটাই সামলাতে জানেন। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সহ অনেক ভাষায় সাবলীল তিনি। তাঁর নাম সাদ্দাম হোসেন, বয়স ৩০ বছর, উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি। তিনি ২০,০০০ টাকা মাসিক বেতনে মেঘালয়ের কিলিং রোডের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তিনি অবিবাহিত থাকবেন ভেবেছিলেন ।ছাদ্দাম কখনও ভাবেননি যে তিনি বিয়ে করবেন, কারণ নিজের কম উচ্চতা নিয়ে তিনি নিজেই সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু একদিন, হঠাৎ করেই একজন পছন্দের মেয়েকে খুঁজে পান এবং দ্রুত বিয়েও করেন।এই মুহূর্তে হাইলাকান্দি এবং পুরো বরাক উপত্যকায় সবচেয়ে খাটো দম্পতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন ও রহিমা বেগম-এর নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে আলোচনার কেন্দ্রে। আশ্চর্যের বিষয়, সাদ্দামের মতো তাঁর স্ত্রীরও উচ্চতা কম। বর্তমানে রহিমা একজন গৃহিণী।
সাদ্দাম হোসেন বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর প্রতিটি মানুষের জন্যই কাউকে না কাউকে সৃষ্টি করেছেন।নিজের মতো উচ্চতার একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া তাঁর পক্ষে সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি বলেন, “আল্লাহ্ আমার জন্যও একজন সঙ্গী পাঠিয়েছেন।”ছাদ্দাম আরও জানান, একদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন তাঁকে মজার ছলে জিজ্ঞেস করেছিল, “আপনি কি বিয়ে করতে পারবেন?”তখন তিনি উত্তর দেন,“এটা মানুষের হাতে নয়। এই ব্যাপারটা পুরোপুরি উপরওয়ালার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।”
২৪ বছর বয়সী বর্তমান স্ত্রী রহিমার খোঁজ পেয়ে সাদ্দাম হোসেন হাইলাকান্দিতে আসেন এবং তিন মাস আগে গোপনে বিয়ে করেন।এরপর কিছুদিন আগে নিজের বাসায় এক ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। সেখান থেকেই তাঁদের বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসে। বর্তমানে ছুটি নিয়ে স্ত্রী রহিমার সঙ্গে নিজ বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন সাদ্দাম।
খাটো বাক্তি সাদ্দাম হোসেন
সাদ্দাম হোসেন এখন মেঘালয়ের University of Science and Technology (USTM)-তে অতিথি আপ্যায়নের (hospitality) কাজে নিযুক্ত।বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অতিথি এলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা, তাঁদের আপ্যায়ন করা – এটাই সাদ্দামের মূল দায়িত্ব।
USTM-তে কাজ শুরু করার আগে, সাদ্দাম বলিউডে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাই গিয়েছিলেন।সলমান খানের সঙ্গে একটি কমেডি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে সিনেমার কাজ আটকে যায়, আর সেই চরিত্রে অভিনয় করা হয়নি তাঁর। পরে তিনি হাইলাকান্দির বিলাইপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।সাদ্দামের বড় স্বপ্ন, হিন্দি সিনেমায় একজন কমেডিয়ান হিসেবে কাজ করা।এই স্বপ্নকে বাস্তব করতে তিনি মুম্বাই গিয়েছিলেন। যদিও করোনা সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তিনি এখনো আশাবাদী – একদিন সলমান খান তাঁকে সিনেমায় সুযোগ দেবেন। ইতিমধ্যে ছাদ্দাম মুম্বাইয়ে কিছু কমেডি শোতেও অংশ নিয়েছেন।
এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন কাজে জড়িত সাদ্দাম হোসেন।এক সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকতার কাজও করতেন।ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে নিজের এলাকার নানা সমস্যা তুলে ধরতেন—যেমন খারাপ রাস্তা, ভাঙা সেতু, স্কুলের দুরবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব ইত্যাদি।এইসব সমস্যাগুলো সরকারের নজরে আনতেই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য।
খাটো দম্পতি সাদ্দাম হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রহিমা
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল।সাদ্দাম জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুভকামনা জানান এবং ভবিষ্যতে সাহায্য করার আশ্বাসও দেন।
এর আগে, হাইলাকান্দির প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন সাদ্দামকে নানা সভা ও অনুষ্ঠানেও নিয়ে যাওয়া হতো।মনোরঞ্জনের জন্য সাদ্দামকে মঞ্চে তুলে ধরতেন গৌতম রায়, এমনকি নির্বাচনী প্রচারেও তাঁকে ব্যবহার করতেন।