পিতা-মাতার স্মৃতিতে দরিদ্র ও দু:স্থদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডাঃ রুবুল আহমেদ

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 9 d ago
ডাঃ রুবুল আহমেদ
ডাঃ রুবুল আহমেদ
 
আরিফুল ইসলাম / গুয়াহাটি
 
যখন অনেক চিকিৎসক রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা নিচ্ছেন, যখন ঔষধের আকাশচুম্বী মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। সেই সময় এক চিকিৎসক দেখিয়েছেন মানবিকতা। তিনি তাঁর মৃত পিতা-মাতার স্মৃতিতে শুরু করেছেন একটি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির। তিনি হলেন বঙাইগাঁওয়ের ডাঃ রুবুল আহমেদ। তিনি বঙাইগাঁও সিভিল হাসপাতালে কর্মরত একজন চিকিৎসক।

ছোটবেলায় স্কুলে “জীবনের লক্ষ্য” বিষয়ের রচনায় যা লিখেছিলেন, আজ তা তাঁর জীবনে বাস্তব হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “হাইস্কুলে পড়ার সময় জীবনের লক্ষ্য নিয়ে রচনা লিখেছিলাম, সেখানে বলেছিলাম আমি বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হবো। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মানবসেবা করব। দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেব—এই কথাগুলো আজও মনে আছে। আমার মা-ও চেয়েছিলেন আমি চিকিৎসক হই। তাই আজ যখন এসব কাজ করি, আমি আত্মতৃপ্তি পাই ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।”
 

ডাঃ রুবুল আহমেদ রোগী দেখছেন
 
প্রতিসপ্তাহের বৃহস্পতিবার, সরকারি দায়িত্ব শেষ করে তিনি বঙাইগাঁওয়ের ধনতোলা বাজারে নিজস্ব ফার্মেসি ‘আসাম মেডিসিন সেন্টার’-এ বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেন। তাঁর এই মহান উদ্যোগে সহায়তা করছে ‘দৃষ্টি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিটি শিবিরে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ জন নারী-পুরুষ রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন তাঁর কাছ থেকে।

‘আওয়াজ-দ্য ভয়েস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডাঃ আহমেদ বলেন, “আমি বঙাইগাঁওয়ের সত্ৰ অঞ্চলে বড় হয়েছি। এখানকার মানুষের আশীর্বাদেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি। ধনতোলার অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। আমি সবাইকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারি না, তাই চিকিৎসার মাধ্যমেই সাহায্য করতে চাই। পিতা-মাতার স্মৃতিতে এই উদ্যোগ নিয়েছি এবং যতদিন বেঁচে থাকব, এই সেবার কাজ চালিয়ে যাব।”
 
ডাঃ রুবুল আহমেদের চিকিৎসা শিবির
 
ছোটবেলায় পিতাকে হারান রুবুল আহমেদ। তাঁর মা অনেক কষ্টে তাঁকে শিক্ষিত করেছেন। সম্প্রতি তাঁর মাও মৃত্যুবরণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় পর্যন্ত তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুতের কোনো সুবিধা ছিল না। দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা রুবুল আহমেদ বুঝেছেন সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সেই অনুভূতি থেকেই এই উদ্যোগ।

তিনি বলেন, “২০১৪ সালে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর ‘নেমকেয়ার’ হাসপাতালে চিফ ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করি। পরে এনএইচএম-এ ধুবরির এক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিই। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বঙাইগাঁও সিভিল হাসপাতালে যোগ দিই এবং তখন থেকে এখানেই কর্মরত আছি।”

তিনি আরও বলেন, “জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যদি শুধু টাকার পেছনে ছুটি, তাহলে মানুষের জন্য কখন কাজ করব? আমি যা শিখেছি, তা দিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। রোগীরা বিনামূল্যে আমার কাছে চিকিৎসা নিয়ে সেই টাকায় ভালো ওষুধ কিনতে পারে। যদি কেউ খুব দরিদ্র হয়, তাহলে আমি নিজের টাকায় ওষুধ কিনে দেওয়ার কথাও ভাবি।”

উল্লেখ্য, তিনি এই মহৎ উদ্যোগটি তাঁর পিতা স্বর্গীয় রহমানুদ্দিন আহমেদ ও মাতা স্বর্গীয়া রূপজান বেগমকে শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ উৎসর্গ করেছেন। এই প্রচেষ্টার ফলে ধনতোলা অঞ্চলের বহু দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তিনি বলেন, এই শিবির চালু করেছেন আশেপাশের ৭-৮টি গ্রামের অতি দরিদ্র মানুষের কথা মাথায় রেখে এবং যতদিন বেঁচে থাকবেন, এই কাজ চালিয়ে যাবেন। তাঁর এই মহান কাজকে স্থানীয় মানুষরা খুব প্রশংসা করছেন।