ব্রিগেডে দেশের বৃহত্তম হিন্দু সম্মেলন: পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের প্রস্তুতিতে মুখর কলকাতা

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 1 d ago
ব্রিগেডে দেশের বৃহত্তম হিন্দু সম্মেলন: পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের প্রস্তুতিতে মুখর কলকাতা
ব্রিগেডে দেশের বৃহত্তম হিন্দু সম্মেলন: পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের প্রস্তুতিতে মুখর কলকাতা
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ

ধর্মীয় আবহে উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্রিগেডের ঐতিহাসিক ময়দান। আগামীকাল এখানেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দেশের বৃহত্তম হিন্দু সম্মেলন, যেখানে পাঁচ লক্ষেরও বেশি ভক্ত একসঙ্গে গীতা পাঠে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। সেই বিশাল আয়োজনকে ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকেই ব্রিগেড ছিল শঙ্খনাদ, বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ও গীতা পাঠের মহড়ায় মুখর। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও নিরাপত্তা কর্মী।

গীতা পাঠের পাশাপাশি থাকবে গীতা পূজা, বৈদিক যজ্ঞসহ নানা ধর্মীয় আচার। আয়োজকদের দাবি, পূর্ব ভারতের ইতিহাসে এত বৃহৎ বৈদিক সমাবেশ এর আগে কখনও হয়নি। দেশ-বিদেশের বহু সন্ন্যাসী, আচার্য ও ভক্তদের আগমন শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। নেপাল, বাংলাদেশ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কাসহ একাধিক দেশের সন্ন্যাসীদের স্বাগত জানাতে করা হয়েছে বিশেষ প্রবেশপথ, বসার জায়গা, ভিআইপি নিরাপত্তা ও পৃথক বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা।
 
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন কার্তিক মহারাজ, যোগগুরু বাবা রামদেব, সাধ্বী ঋতম্ভরা সহ বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা হিন্দু সন্ন্যাসী ও ধর্মীয় নেতা। কার্তিক মহারাজ সকাল থেকেই ব্রিগেডের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর পাশাপাশি বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, “হিন্দু ঐক্যের বার্তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজন ঐতিহাসিক ভূমিকা নেবে।” ব্রিগেডের মঞ্চ ঘিরে রয়েছে চারটি বড় টেন্ট, সিসিটিভি নজরদারি রুম এবং নিরাপত্তা ব্যারিকেড।
 
ভিড় নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে প্রশাসন। দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে চারটি বড় প্রবেশদ্বার ও একাধিক ছোট গেট। প্রতিটি গেটের সামনে রয়েছে প্রায় ৩৫টি তথ্য ও সেবাকেন্দ্র, যেখানে পানীয় জল, প্রাথমিক চিকিৎসা, প্রসাদ, বিশ্রামের ব্যবস্থার পাশাপাশি মিলবে নানা তথ্য সহায়তা। মূল গীতা পাঠ মঞ্চের পাশে আরও দুটি মঞ্চে চলবে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
 
আগামীকালের অনুষ্ঠান সকাল ন’টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর দু’টো পর্যন্ত চলবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগত প্রতিটি ভক্তকে একটি করে গীতা উপহার দেওয়া হবে। মিছিল থেকে মতুয়া সমাজের উদ্দেশে বার্তা দেবে বিজেপিও। ইতিমধ্যেই ময়দানজুড়ে চালু হয়েছে লাউডস্পিকার মহড়া, যাতে একযোগে পাঠের সময় তালমেল বজায় রাখা যায়।
 
অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের যোগদান নিশ্চিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না। এ নিয়ে বিজেপির অভিযোগ, “এত বড় শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি অস্বাভাবিক।” গত কয়েক বছরেও মুখ্যমন্ত্রী এমন ধর্মীয় সম্মেলনে উপস্থিত থাকেননি বলে দাবি তাঁদের।
 
এদিকে ব্রিগেডের চারপাশে ইতিমধ্যেই বাড়ছে ভিড় ও উন্মাদনা। সূর্যাস্তের পরও প্রস্তুতির কাজ থামেনি। নিরাপত্তা, লজিস্টিকস এবং ধর্মীয় আয়োজন, সব মিলিয়ে কলকাতা দেখছে এক বিরল উৎসবমুখর পরিবেশ।
 
ব্রিগেডের ময়দানে এখন শুধু অপেক্ষা রাত পোহানোর। পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে একযোগে গীতা পাঠের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে প্রস্তুত কলকাতা, প্রথমবারের মতো এমন এক ধর্মীয় সমাবেশের দিকে তাকিয়ে রাজ্যবাসী।