হাই-ভোল্টেজ ৬ ডিসেম্বর: বাবরি ভিত্তিপ্রস্তরকে ঘিরে উত্তেজনা, প্রশাসনের ‘বাধা’-র অভিযোগ হুমায়ুনের
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
ভোটের মুখে রাজ্যে চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। এর মধ্যেই বাবরি মসজিদের আদলে বেলডাঙায় মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত উত্তেজনা। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও তৃণমূল থেকে বিদ্রোহী সুরে বক্তব্য রাখা হুমায়ুন আবারও জানালেন, “আজও যদি প্রশাসন বাধা দেয়, মানব না। আমি তৃণমূলকে প্রাক্তন করবই।” তাঁর ভাষণে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা, স্পষ্ট ক্ষোভ এবং স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ।
হুমায়ুনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার বেলা বারোটায় কার্যকর হবে মূল শিলান্যাস অনুষ্ঠান। কোরান পাঠের মাধ্যমে পূর্ণ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় শেষ হবে সমগ্র অনুষ্ঠানটি। তিনি দাবি করেন, বাবরি মসজিদের আদলে নির্মাণ হতে যাওয়া এই মসজিদ কেবল ধর্মীয় ভাবনার প্রতিফলন নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেই তা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তবে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সরব হন তিনি। একদিকে বলেন, “প্রশাসন অনেক সাহায্য করছে।” আর অন্যদিকে তীব্র অভিযোগ, “গাড়ি চলাচলে পুলিশ ইচ্ছে করে বাধা দিচ্ছে, যাতে মানুষ অনুষ্ঠানে আসতে না পারে।” তাঁর অভিযোগে আরও যুক্ত করেন, প্রশাসনের কিছু অংশ ‘দ্বৈত ভূমিকা’ পালন করছে। ফলে অনুষ্ঠানে আগত বহু মানুষকে নাকি ঘুরপথে যেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, বেলডাঙা জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। ভোটমুখী বাংলার ৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায়। রাস্তায় রাস্তায় চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল, নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এত পুলিশ মোতায়েন বহুদিন দেখা যায়নি।
হুমায়ুনের বক্তব্যে কার্যত স্পষ্ট রাজনৈতিক আগুন। তিনি অভিযোগ তোলেন, অনুষ্টানকে ঘিরে তাঁকে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। বলেন, “আমি পিছাব না। মানুষ আছে আমার সঙ্গে। কোনও প্রশাসনিক বাধায় অনুষ্ঠানের পথ রুখে রাখা যাবে না।” এদিনের বক্তব্যে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে আরও বলেন, “সময় এলেই তৃণমূলকে প্রাক্তন করব।” তাঁর এই মন্তব্যে জোর জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে, তিনি কি তবে শীঘ্রই রাজনৈতিক রং বদলাতে চলেছেন?
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, মানুষের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কোনওভাবেই উত্তেজনা ছড়াতে দেওয়া হবে না বলেই তাঁদের স্পষ্ট অবস্থান।
৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের স্মৃতি ভারতীয় রাজনৈতিক-সামাজিক পরিসরে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ফলে এই তারিখে যেকোনও ধরনের ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে প্রশাসন সর্বদাই চরম সতর্ক থাকে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হুমায়ুনের এই উদ্যোগে সেই স্পর্শকাতরতা আরও বেড়েছে। তাঁর অনুষ্ঠানে ভিড় কেমন হয়, কোনও অশান্তি হয় কি না এবং তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান কোন দিকে গড়ায়—সব মিলিয়ে নজর রাজ্যজুড়ে।
সর্বোপরি, বেলডাঙায় বাবরি আদলে মসজিদের শিলান্যাস ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা, প্রতিশ্রুতি, অভিযোগ এবং রাজনৈতিক বার্তার তীব্র মিশ্রণ। ভোটের আগে এই ঘটনাই কি নতুন সমীকরণ তৈরি করবে? আপাতত তাতে থরথর করছে রাজনৈতিক অঙ্গন।