ব্রিগেডে পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ, আধ্যাত্মিক মহামিলনে প্রাণ ফিরল বঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে
কলকাতা
রবিবার সকাল থেকেই ঢেউয়ের পর ঢেউ মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। চোখে পড়ছে গেরুয়া পতাকার ঢল, আর হাতে হাতে ভাগবত গীতার প্রতিলিপি। আধ্যাত্মিক আবহে মোড়া এই ভিড়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাধু–সাধ্বিনী, ভক্ত এবং সন্ন্যাসী। আজকের এই মহাধর্মীয় আয়োজনের নাম ‘পঞ্চ লক্ষ্যে গীতা পাঠ’, অর্থাৎ পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে একসাথে গীতার শ্লোক পাঠ।
এই অনন্য আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে ‘সনাতন সংস্কৃতি সংসদ’, যেখানে দেশের বিভিন্ন মঠ, আশ্রম ও হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব একত্রিত হয়েছে। সকাল থেকেই শুরু হয়েছে নৃত্য, সঙ্গীত ও বেদিক স্তোত্রের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যা দিনভর অনুষ্ঠানের সুর ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্রিগেডের প্রান্ত থেকে প্রান্তে।
একজন পশ্চিমবঙ্গের আশ্রমের সন্ন্যাসিনী জানান, “আমরা বাড়িতে গীতা পড়ি, কিন্তু পাঁচ লক্ষ মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে গীতা পাঠ মানেই আত্মজাগরণ। এ প্রার্থনা বিশ্বের শান্তি ও মানবকল্যাণের জন্য।” তার কণ্ঠের আবেগ যেন হাজারো মানুষের অনুভূতিকে এক সুতোয় গেঁথে দিল।
আধ্যাত্মিক নেতৃত্বে থাকছেন গীতা মানীষী মহামণ্ডলের স্বামী জ্ঞানানন্দজি মহারাজ, আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন যোগগুরু বাবা রামদেব এবং আরও অনেকে, দেশজুড়ে যাঁরা আধ্যাত্মিক নির্দেশনার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
আয়োজকদের দাবি, এই মহামিলনের উদ্দেশ্য কেবল গীতা পাঠ নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠা করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করা।
লোক ভবনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি. ভি. আনন্দ বোস ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিল্লির নির্ধারিত সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি গতরাতে কলকাতায় ফিরে আসেন শুধুমাত্র এই আধ্যাত্মিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য।
রাজ্যপাল শুধু উপস্থিতই থাকছেন না, তিনি ভাষণও দেবেন বলে নিশ্চিত করেছে লোকভবন।উল্লেখযোগ্যভাবে, আয়োজকরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বিস্তীর্ণ অঞ্চলে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশকে সামনে রেখে কড়াকড়ি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
ব্রিগেডের মাঠজুড়ে আজ যেন একটাই বার্তা, ভক্তি, ঐক্য, শান্তি এবং মানবতার শক্তি ভয় ও বিভেদের চেয়ে বড়। পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত বাংলার আধ্যাত্মিক মানচিত্রে নতুন অধ্যায় যোগ করল নিঃসন্দেহে।