৫ মাসের লড়াইয়ের পর অবশেষে ঘরে ফেরা, মেহদিপুর সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলে

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 1 d ago
মেহদিপুর সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলে
মেহদিপুর সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলে
 
কলকাতা 
 
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘটে যাওয়া অশ্রু, অপেক্ষা এবং সংগ্রামের দগদগে অধ্যায়ের অবসান হলো অবশেষে। অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবির দুঃস্বপ্নের দিনগুলি শুক্রবার সন্ধে ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ হয়, যখন তিনি তাঁর আট বছরের ছেলেকে নিয়ে মালদার মেহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাটিতে ফিরলেন। বীরভূমের মেয়ে সোনালি বিবির দেশে ফেরা বহু বিতর্ক, আইনি লড়াই এবং সরকারের প্রতি অভিযোগের মধ্যেই সম্ভব হয়েছে। কনকনে শীতের মধ্যে বেগুনি শাল গায়ে জড়িয়ে ছোট্ট ছেলের হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে প্রবেশের দৃশ্য যেন অন্ধকারের পর প্রথম আলোর অনুভূতি তৈরি করে। বিজিবি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে BSF-এর হাতে তুলে দেয়। তবে তাঁর সঙ্গে বাকি চার ভারতীয় বন্দির না ফেরা নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে।
 
সোনালির প্রত্যাবর্তনে যেমন স্বস্তি ও আনন্দের স্রোত, তেমনই প্রশ্নের ঝড়ও তীব্র হয়ে উঠেছে। মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আরও চারজন ভারতীয় ছিলেন। তাঁদের বাদ দিয়ে শুধু সোনালি ও তাঁর সন্তানকে ফেরানো হলো কেন? যদি প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হন, তাহলে তাঁদের ক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কীসের ভিত্তিতে? এই প্রশ্নের কোনও জবাব না দিয়েই ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
সোনালি খাতুন এবং তার ছেলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করার এক মূহুৰ্ত
 
ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে একটি দীর্ঘ আইনি লড়াই। গত ১৭ জুন দিল্লির রোহিণীতে স্বামী দানিশ শেখ ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন সোনালি। বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁদের “বাংলাদেশি” সন্দেহে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর কোনও বিচার ছাড়াই ২৬ জুন সোনালিকে এবং আরও দুইজনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়। একই ঘটনার শিকার হয় বীরভূমের মুরারইয়ের সুইটি বিবি ও তাঁর দুই সন্তানও। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় চার সপ্তাহের মধ্যে ছয়জনকেই ভারতে ফেরাতে হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু ফেরাতে সময়ক্ষেপণের পর কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে যায়।
 
প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে জানান, যদি কেউ অনুপ্রবেশকারী হয় তবে তাকে রাখা হবে না, কিন্তু জন্মসনদসহ নথিগুলি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। তাই অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তাঁদের ফেরানো জরুরি। দীর্ঘ দেরির পর সেই নির্দেশের আংশিক প্রয়োগ হলো, অন্তত সোনালি ও তাঁর সন্তানের ক্ষেত্রে।
 
বাড়িতে মেয়ের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় দিন কাটানো বাবা ভাদু শেখ আবেগে ভেঙে পড়েন। তাঁর কণ্ঠে একইসঙ্গে শ্বাসরুদ্ধ আনন্দ ও তীব্র ক্ষোভের সুর, মেয়েকে ফিরে পেয়েছি, এটা আনন্দের। কিন্তু বিচার না করেই জেলে রাখা হলো। কোনও ডাক্তার দেখানো হয়নি। ছেলের পড়াশোনা নষ্ট হয়ে গেল। মেয়ের শরীর খারাপ। এত অবিচারের দায় কি কেউ নেবে? আমরা গরিব মানুষ, আমাদের পক্ষে এত সংগ্রাম করা সহজ নয়।
 
যদিও সোনালির ঘরে ফেরা মানবিক দিক থেকে একটি বড় স্বস্তি, তবুও লড়াই শেষ হয়নি। বাকি চারজন ভারতীয় কবে ফিরবেন তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁদের না ফেরার কারণ, সরকারের ভূমিকা এবং ভবিষ্যতে এমন আইনি অপব্যবহারের পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একই সঙ্গে সোনালির স্বাস্থ্য, তাঁর গর্ভাবস্থা, সন্তানের পড়াশোনা এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়ে পরিবার উদ্বেগে রয়েছে।
 
সীমান্ত, পরিচয় এবং রাজনৈতিক হিসেব–নিকেশের এই জটিল বাস্তবতায় সোনালির দেশে ফেরা অবশ্যই একটি মানবিক বিজয়। কিন্তু একইসঙ্গে এটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে এখনও বহু মানুষ আটকে পড়ে আছেন। তাঁদের মুক্তির লড়াই এখনো শেষ হয়নি, বরং সেই পথই আরও কঠিন হতে চলেছে।