বন্ধু জ়ুবিনকে হারিয়ে শোকে ও ক্ষোভে ভরপুর সঙ্গীতশিল্পী জোজো

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 25 d ago
বন্ধু জ়ুবিনকে হারিয়ে শোকে ও ক্ষোভে ভরপুর সঙ্গীতশিল্পী জোজো
বন্ধু জ়ুবিনকে হারিয়ে শোকে ও ক্ষোভে ভরপুর সঙ্গীতশিল্পী জোজো
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ 

অসমের প্রিয় শিল্পী জ়ুবিন গার্গের আকস্মিক প্রয়াণের শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, গায়িকা জোজো মুখোপাধ্যায়। এদিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন তাঁর মনের গভীর কষ্ট, অনুযোগ ও প্রশ্নের কথা।
 
জোজোর কথায়, “গরিমা গার্গ শইকীয়া যদি সঙ্গে থাকতেন, জ়ুবিন এভাবে চলে যেত না।” এই আক্ষেপ যেন তাঁকে আজও তাড়া করে। তাঁর মতে, জ়ুবিন সারাজীবন ছিলেন ‘রাতজাগা তারা’, রাতে গান বাঁধতেন, সুর তুলতেন, সকালে বিশ্রাম নিতেন। তবু সেই বিশ্রামের সময়েই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল স্কুবা ডাইভিংয়ে, “কেউ থামাল না কেন?” ক্ষোভ প্রকাশ করেন জোজো।
 
সম্প্রতি শাশুড়িমার মৃত্যুতে উত্তরবঙ্গে গিয়ে সেখান থেকে সরাসরি অসমে যান তিনি। জ়ুবিনের বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই দেখা করেন তাঁর অসুস্থ বাবার সঙ্গে। সেই সাক্ষাতের স্মৃতি বলতে গিয়ে জোজো বলেন, “বৃদ্ধ মানুষটা প্রায় কথা বলতে পারেন না। পুত্রশোকে ভেঙে পড়েছেন সম্পূর্ণভাবে। যেন জীবনটাই থেমে গেছে।”
 
এরপর জোজো যান জ়ুবিনের সমাধিস্থলে। সেই দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর চোখে জল এসে যায়, “অসমবাসী তাঁকে এখন দেবতার মতো শ্রদ্ধা করছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ফুল, ধূপ, গামোছা নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন। শহরের দেওয়ালে, ব্যানারে, এমনকি স্কুলের প্রাঙ্গণেও বাজছে জ়ুবিনের গান। গোটা অসম আজ এক সুরেলা স্মৃতিস্তম্ভ।”
 
সেখান থেকে সরাসরি তিনি যান হাসপাতালে ভর্তি গরিমা গার্গের কাছে। সাক্ষাৎকারে জোজো জানান, “গরিমা আমায় বলল, জ়ুবিন চলে যাওয়ার পর থেকে নিজেকে সামলানোর সময় পাইনি। আমি আর নিতে পারছি না এই কষ্ট।” গরিমার কণ্ঠে শোনা যন্ত্রণা জোজোকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি এটাও বলেন, ''গরিমাকে আজ হসপিটাল থেকে ছাড়ার কথা। প্রার্থনা করব ও যেন ভালো থাকে।"
 
বন্ধুর স্মৃতিতে আবেগপ্রবণ হয়ে জোজো বলেন, “ওর মতো উদার মনের মানুষ আজ খুব কম আছে। একবার আমার জন্মদিনে আমি মনখারাপ করে ছিলাম, ও নিজে উদ্যোগ নিয়ে ছোট্ট পার্টি দিয়েছিল। এমন বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।”
 
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ঘনিষ্ঠদের কাছে অনুরোধ করেছেন, প্রতি বছর যেন জ়ুবিন গার্গের নামে একটি সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজিত হয়, যাতে তাঁর শিল্প ও মানবিকতা প্রজন্মের পর প্রজন্মে বেঁচে থাকে।
 
শেষে জোজো বলেন, “প্রায় দু’মাস হয়ে গেল, তবু বিশ্বাস করতে পারছি না জ়ুবিন নেই। মনে হয়, ও কোথাও আছে, খুব কাছেই।” বন্ধুত্বের এই অকৃত্রিম স্মৃতি, এক শিল্পীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর অসমের আবেগ, সব মিলিয়ে জোজোর এই সাক্ষাৎকার যেন এক নীরব শ্রদ্ধাঞ্জলি, সেই সুরের রাজপুত্র জ়ুবিন গার্গের প্রতি।